আজকাল ওয়েবডেস্ক: পৃথিবীর মহাসাগরগুলো শুধু প্রাণবৈচিত্র্যের নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও এক বিস্ময়কর ভাণ্ডার। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, সমুদ্রের জলে লুকিয়ে আছে ট্রিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের সোনা। তবে এত সোনা থাকলেও সেটি আহরণ করা মোটেও সহজ কাজ নয়।


বিজ্ঞানীদের ধারণা, সমুদ্রজলে প্রায় ২ কোটি টন সোনা দ্রবীভূত অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২ কোয়াড্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। হিসেব বলছে, প্রায় ১০ কোটি মেট্রিক টন সমুদ্রজলে মাত্র এক গ্রাম সোনা মেশানো থাকে। এত ক্ষুদ্র পরিমাণে ছড়িয়ে থাকার কারণেই তা কার্যত অদৃশ্য।


প্রকৃতির নিজস্ব প্রক্রিয়াতেই সোনা সমুদ্রের জলে পৌঁছায়। একটি বড় উৎস হলো ভূমিক্ষয়। শিলা ও খনিজ পদার্থ বৃষ্টির জল ও নদীর স্রোতে ক্ষয় হয়ে ধীরে ধীরে সোনার অণুসমূহকে সাগরে নিয়ে আসে। এছাড়াও সমুদ্রতলের হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট বা উষ্ণ প্রস্রবণ থেকেও সোনা বের হয়। যেখানে টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়, সেখানে তাপীয় প্রভাবে দ্রবীভূত খনিজসমৃদ্ধ তরল নির্গত হয়, যার মধ্যে থাকে সোনাও। বাতাসের সঙ্গে উড়ে আসা ক্ষুদ্র কণিকাও সমুদ্রে মিশে যায়।

আরও পড়ুন: বিশ্বের দরবারে নতুন উচ্চতা পেল ভারতীয় রেল, রইল ভিডিও


যেহেতু সমুদ্র পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এবং তাতে সোনা অতি ক্ষুদ্র মাত্রায় ছড়ানো, তাই এটি আহরণ করা ভীষণ কঠিন। এক লিটার সমুদ্রজলে সোনার পরিমাণ এতটাই সামান্য যে তা প্রায় শনাক্ত করাই যায় না।


১৯৪১ সালে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল পদ্ধতির। কিন্তু হিসেব বলছে, ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে আহরিত সোনার দামের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি খরচ পড়বে। অর্থাৎ লাভের পরিবর্তে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।


২০১৮ সালে Journal of the American Chemical Society-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, এমন এক ধরনের উপাদান তৈরি করা সম্ভব যা স্পঞ্জের মতো কাজ করে সমুদ্রজল থেকে সোনা শোষণ করতে পারবে। তবে এই পদ্ধতিও এখনো পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ। এখান থেকে বৃহৎ পরিমাণ সোনা আহরণ করা সম্ভব হয়নি।


বর্তমানে গবেষকরা মনোযোগ দিচ্ছেন শিল্পকারখানায় হারিয়ে যাওয়া সোনা পুনরুদ্ধারে। অনেক সময় গয়না, ইলেকট্রনিক্স বা শিল্প প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচুর সোনা নষ্ট হয়, সেগুলো পুনরুদ্ধার করা তুলনামূলক সহজ এবং লাভজনক।


অন্যদিকে, ভবিষ্যতের খনিজ আহরণের বড় ভরসা হতে পারে মহাকাশ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রহাণুতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান খনিজ, যার মধ্যে সোনাও রয়েছে। যদি প্রযুক্তিগত ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়, তবে একদিন মহাকাশ খনিই হতে পারে মানবজাতির সবচেয়ে বড় সম্পদভাণ্ডার।


মহাসাগরে লুকানো সোনা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর, তবে তা আহরণ করা প্রায় অসম্ভবের সমান। খরচ, প্রযুক্তি এবং পরিবেশগত ঝুঁকি সবকিছু মিলিয়ে সমুদ্র থেকে সোনা আনার স্বপ্ন এখনও দূর ভবিষ্যতের ব্যাপার। আপাতত বাস্তবসম্মত দিক হল শিল্পে অপচয় হওয়া সোনা পুনরুদ্ধার এবং মহাকাশ খননের সম্ভাবনার দিকে নজর দেওয়া।