আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিয়েগো জোটাকে স্মরণে আবেগঘন শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে তাঁর আইকনিক ২১ নম্বর জার্সি তুলে দেওয়া হচ্ছে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রাক্তন সতীর্থ রুবেন নেভেসকে। শুক্রবার পর্তুগাল স্কোয়াড ঘোষণা করার সময় জাতীয় দলের কোচ রবার্তো মার্টিনেজ এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। গত ৩ জুলাই স্পেনের উত্তর-পশ্চিমে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৮ বছর বয়সী দিয়েগো জোটা এবং তাঁর ছোট ভাই আন্দ্রে সিলভা। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে বিশ্ব ফুটবলে। ক্লাব, সতীর্থ এবং ভক্তরা অশ্রুভেজা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জোটাকে। দিয়েগো জোটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রুবেন নেভেস বর্তমানে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল-হিলালে খেলছেন।

পর্তুগালের যুবদল থেকে শুরু করে এফসি পোর্তো ও উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স পর্যন্ত জোটার সঙ্গে দীর্ঘ ফুটবল-যাত্রা ভাগ করেছেন তিনি। এমনকি জোটার শেষকৃত্যের সময়েও কফিন বহনকারীদের একজন ছিলেন তিনি। পর্তুগাল কোচ মার্টিনেজ সংবাদমাধ্যমকে জানান, এই জার্সি হস্তান্তর আসলে একটি প্রতীকী উদ্যোগ, যাতে জোটার স্মৃতি প্রতিটি ম্যাচে বেঁচে থাকে। তিনি বলেন, ‘দিয়েগোর অনুপস্থিতি আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ করেছে। ও বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিল, আমরা তার স্বপ্ন পূরণের জন্য খেলব। আর ২১ নম্বর জার্সি এখন নেভেসের কাঁধে, যে ওর সঙ্গে বিশেষ বন্ধনে বাঁধা ছিল’।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা যখনই মাঠে নামব, জোটার শক্তি আমাদের সঙ্গে থাকবে। এই জার্সি হস্তান্তরই আমাদের উপায়, যাতে ওর সাহসী আত্মা প্রতিটি স্পর্শে, প্রতিটি দৌড়ে, প্রতিটি গোলে অনুপ্রাণিত করে’। প্রসঙ্গত, শেষবার জোটা পর্তুগালের হয়ে খেলেছিলেন গত জুন মাসে স্পেনের বিরুদ্ধে নেশনস লিগ ফাইনালে। তাঁর প্রয়াণের পর জোটার ক্লাব লিভারপুল স্থায়ীভাবে অবসর দিয়েছে ২০ নম্বর জার্সিকে যেটা পরে খেলতেন তিনি। ক্লাব থেকে প্রাক্তন সতীর্থ, সবার শ্রদ্ধাতেই এখনও মাঠেই রয়েছেন পর্তুগিজ ফুটবলার। উল্লেখ্য, আগামী ৬ ও ৯ সেপ্টেম্বর আর্মেনিয়া ও হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব দিয়ে অভিযান শুরু করবে পর্তুগাল। সেই দলে রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, জোয়াও ফেলিক্স এবং এখন রুবেন নেভেস। নেভেস শুধু একজন খেলোয়াড় হিসেবে নয়, প্রয়াত বন্ধুর অমর স্মৃতির বাহক হিসেবে মাঠে নামবেন পর্তুগালের হয়ে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুলাই নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী প্যারিস সেইন্ট-জার্মানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে চেলসি ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ জেতে। এই জয়ের ফলে ইপিএলের ক্লাব আনুমানিক ৮৪.৪ মিলিয়ন পাউন্ড পুরস্কার পাওয়ার আশা করেছিল। এর মধ্যে প্রায় ১১.৪ মিলিয়ন পাউন্ড খেলোয়াড়দের বোনাস হিসেবে বরাদ্দ করা হয়, যেখানে প্রতিটি সদস্য প্রায় ৪০০,০০০ পাউন্ড পাবেন। ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালের দু’সপ্তাহেরও কম সময় আগে, স্পেনের সেরনাডিলায় একটি দুর্ঘটনায় জোটা এবং তাঁর ভাই মারা যান। এই দুঃসংবাদ চেলসির শিবিরকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে উইঙ্গার পেদ্রো নেটোকে। তিনি জোটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং উভয়েই উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স ও পর্তুগাল জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলেছেন। 

দ্য অ্যাথলেটিকের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ক্লাব এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, বোনাস পুলের সমান অংশ জোটা ও সিলভার পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা হবে। চেলসির এই মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন সকলেই। জানা গিয়েছে, মোট অর্থের পরিমাণ আনুমানিক ৫০০,০০০ ডলার (৩৬৮,০০০ পাউন্ড)। জোটার প্রয়াণের খবর পেয়ে নেটো পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে আবেগপ্রবণ ছিলেন এবং চেলসির কোয়ার্টার-ফাইনালে পালমেইরাসের বিরুদ্ধে জয়ের সময় জোটা ও তাঁর ভাইয়ের নাম লেখা একটি শার্ট পরিধান করে বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কয়েকজন সতীর্থও গোল উদযাপনে জোটার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। লিভারপুল ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে, তারা জোটার ২০ নম্বর জার্সি অবসরে পাঠাবে। এমনকি, পর্তুগিজ ফুটবলারের বাকি দু’বছরের চুক্তি সম্মান করবে, পাশাপাশি তাঁর তিনটি ছোট সন্তানের শিক্ষার খরচও বহন করবে। উলভারহ্যাম্পটনও মোলিনউক্সে একটি টিফো প্রদর্শনসহ অন্যান্য শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছে।