সংক্ষিপ্ত স্কোর-ভারত ২২৪ (প্রথম ইনিংস), ৩৯৬ (দ্বিতীয় ইনিংস)
ইংল্যান্ড-২৪৭ (প্রথম ইনিংস), ৩৬৭ (দ্বিতীয় ইনিংস)
৬ রানে জয়ী ভারত। ম্যাচের সেরা মহম্মদ সিরাজ।
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহম্মদ সিরাজ ম্যাজিক দেখা গেল ওভালে। হায়দরাবাদির আগুনে স্পেলে ভারত সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনল।
চতুর্থ দিনে হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ফেলেছিলেন সিরাজ। সমালোচনা ধেয়ে এসেছিল তাঁর দিকে। প্রাক্তনদের তীব্র সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন সিরাজ। সেই সিরাজ এদিন প্রায়শ্চিত্ত করলেন। ক্রিকেট বারবার সুযোগ দেয় না। এক বলের খেলা ক্রিকেট। সেখানে ক্রিকেট আরও একটা সুযোগ দিয়েছিল সিরাজকে। হায়দরাবাদি তারকা সেই সুযোগ দু'হাতে লুফে নেন। ওভালে নিজেকে নিংড়ে দিলেন। তিরিশ ওভার হাত ঘুরিয়ে পাঁচ-পাঁচটি উইকেট নিলেন। পঞ্চম দিনের শুরুতে উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সাজঘরে জোরালো ধাক্কা দিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের শেষটাও হল তাঁরই হাতে।
আরও পড়ুন: বিরাট-রোহিত খেললে সিরিজের পরিণতি অন্য হতে পারত, দাবি ইংল্যান্ডের প্রাক্তন তারকার...
বল করার সময়ে সিরাজকে দুটো ভারতবর্ষ পেরোতে হয়। এক ভারতবর্ষ তাঁকে উৎসাহ দেয়, প্রতিটি মুহূর্তের জন্য চিয়ার করে। আরেক ভারতবর্ষ অপেক্ষায় থাকে কবে সিরাজ ভুল করবেন। তিনি ভুল করলেই নখদাঁত বের করে সেই ভারতবর্ষ। সোমবার সিরাজ এক অন্য অবতারে ধরা দিলেন ওভালে। তিনিই দেশের নায়ক, তিনিই আবার মহানায়ক।

তিনি জশপ্রীত বুমরাহর ছায়ায় ঢেকে থাকেন। যদি একজনকে বাদ দিতে হয়, তাহলে সবার আগে কোপ পড়বে তাঁর উপরেই। তবুও তিনি দেশের জন্য নিয়োজিত এক প্রাণ। সর্বশক্তি দিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। এদিন তিনি পার্শ্বনায়ক থেকে মহানায়ক। সিরাজের মূর্ছণায় ওভালে বেজে উঠল জনগণমণ ধ্বনি। আজ জনগণমনের অধিনায়ক একজনই। তিনি মহম্মদ সিরাজ।
ওভালে জেতার জন্য ৩৫ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। ভারতের জেতার জন্য প্রয়োজন ছিল চার-চারটি উইকেট। ভারতের সুযোগ কম। বরং ইংল্যান্ড অ্যাডভান্টেজে বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। কিন্তু মহম্মদ সিরাজ অন্যকিছু হয়তো ভেবে রেখেছিলেন। দিনটা তাঁর। ওভাল টেস্টে লেখা থাকবে তাঁর নাম। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা শুরুতেই রান দিয়ে দিলেন একগাদা। চাপ বাড়ল ভারতের উপরে। সিরাজ বল হাতে প্রথমে ফেরালেন স্মিথকে। তার পরে ওভারটন। অন্যদিকে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অ্যাটকিনসন। তিনি মারমুখী। এদিকে কৃষ্ণর ইয়র্কারে উইকেট ভাঙল টংয়ের। অ্যাটকিনসনের উইকেট ভেঙে ব্রিটিশ-ভূমে নতুন এক রূপকথা লিখলেন সিরাজ।

কাজটা খুবই কঠিন ছিল ভারতের জন্য। ২-১-এ পিছিয়ে থেকে ওভালে খেলতে এসেছিল শুভমান গিলের অপেক্ষাকৃত নবীন দল। তার উপরে মোক্ষম সময়ে সরে যান জশপ্রীত বুমরাহ। রক্তাল্পতা ভারতের বোলিং লাইন আপে। সেই বোলিংয়ের লাইটহাউজ একজনই। তিনি মহম্মদ সিরাজ। এই সিরিজ হেরে গেলে গৌতম গম্ভীরের উপরে প্রবল চাপ তৈরি হয়ে যেত। সিরাজ একইসঙ্গে ভারতকে সমতায় ফেরালেন, অন্যদিকে গম্ভীরকেও বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচালেন। রানির দেশ থেকে সিরিজ ২-২ করে দেশে ফিরছে ভারত।
লর্ডসে ট্র্যাজিক হিরো থেকে গিয়েছিলেন সিরাজ। শোয়েব বশিরের বলটা তাঁর ব্যাটে লেগে উইকেট ভেঙে দেয়। সিরাজ সারা রাত ঘুমোতে পারেননি। খাননি পর্যন্ত। ভাগ্য দ্রুতই বদলে যায়। সেদিন তিনি ছিলেন ব্যর্থ এক নায়ক। এদিন তিনিই নায়ক। ইংল্যান্ড থেমে গেল ৬ রান দূরে। গৌতম গম্ভীর ও শুভমান গিল জুটি সফল। জয় অনেককিছু আড়াল করে দেয়। দুর্বলতা ঢেকে দেয়। আজকের পরে জয়ের আলোয় ঢাকা পড়ে যাবে ভারতের সব দুর্বলতা। এই জয় অনুভবের। এই জয় উপভোগের। গিলের ভারত রুপোলি রেখার সন্ধান দিয়ে গেল বিলেতের মাটিতে। টেস্ট ম্যাচেও লুকিয়ে রয়েছে এত আবেগ, এত টেনশন, এত উদ্বেগ--ওভাল টেস্ট না দেখলে বোঝাই যেত না। টেস্ট ক্রিকেটের জয়ধ্বনি শোনা গেল ওভালে।

প্রথম ইনিংসে চারটি, দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ-পাঁচটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা মহম্মদ সিরাজই। আজকের পর কি তাঁকে ট্রোলিং বন্ধ হবে? সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ তাঁকে আর বলবে না তো অটোচালকের ছেলে? মহানায়কের সার্চলাইট এসে পড়বে তো মহম্মদ সিরাজের উপরে? ওভালে হায়দরাবাদি পেসার দেখিয়ে দিলেন, মহম্মদ সিরাজ হওয়া সহজ কথা নয়।
আরও পড়ুন: ওভালের ম্যাচ অফিসিয়ালদের একহাত, কেন চটলেন কার্তিক, নাসের?
