আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তর প্রদেশে সম্প্রতি চিকিৎসা গাফিলতির এক নির্মম দৃশ্য দেখা গিয়েছে৷ গাজিয়াবাদ জেলার গুলমোহর এনক্লেভ এলাকার এক গৃহবধূর জীবনে ভয়াবহ এক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। চরম দুর্ভাগ্যজনক ও ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তর প্রদেশ। চিকিৎসা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে এই ঘটনা। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই যুবতী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে গাজিয়াবাদের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু এই খুশির মুহূর্তই কিছুদিনের মধ্যে বিষাদে পরিণত হয়। জানা যায় অপারেশনের পর তাঁর শরীরে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে অপারেশনের কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি প্রচণ্ড পেটব্যথা, জ্বর এবং শারীরিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। নার্সিং হোমের চিকিৎসকেরা এই ধরণের লক্ষণকে সাধারণ প্রসব-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বলে আশ্বস্ত করেন বলে পরিবার সূত্রে খবর। ফলে প্রাথমিকভাবে পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নেননি। কিন্তু সপ্তাহ পেরোতেই তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটতে থাকে। ব্যথা এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলা করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে তাঁর পক্ষে। 

এরপর তাঁর স্বামী চিরাগ কাটারিয়া শেষমেশ আর দেরি না করে ১০ জুলাই একটি আল্ট্রাসাউন্ড করান। তাতে খানিক অস্পষ্টতা দেখা দিলে পরদিন, অর্থাৎ ১১ জুলাই, তিনি স্ত্রীর সিটি স্ক্যান করান। ওই স্ক্যানে যা ধরা পড়ে, তা দেখে চিকিৎসক ও পরিবার, উভয়েই চমকে ওঠেন। যুবতীর পেটের ভিতরে কিছু একটা অদ্ভুত বস্তু দেখতে পান তাঁরা। পরে নিশ্চিত করা হয় এটি অপারেশনের কাপড়ের টুকরো।

খবর অনুযায়ী, এই কাপড়টি সিজারের অপারেশনের সময় ভুলবশত রোগীর শরীরের ভেতরে থেকে যায়। এমন একটি ভয়াবহ ভুল যেকোনও রোগীর জীবনে মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। অবিলম্বে তাঁর আর একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। কাপড়টি অপসারণ করা হয়। এই দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের পর যুবতীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটে।

 ঘটনার জেরে চিরাগ কাটারিয়া গাজিয়াবাদের পুলিশ কমিশনার ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMO)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে তিনি নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ এবং দায়িত্বরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতির অভিযোগ তুলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। 

 ঘটনা ঘিরে গোটা এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সামাজিক সংগঠনগুলো বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার মান ও সুরক্ষা প্রোটোকল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে কড়া তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ স্বামীর খুনের অভিযোগে প্রাক্তন রসায়ন অধ্যাপিকার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, হাইকোর্টে নিজেই লড়লেন মামলা 

স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুতর। ইতিমধ্যেই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত নার্সিং হোমের কাগজপত্র ও চিকিৎসা নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি চিকিৎসা গাফিলতির প্রমাণ মেলে, তবে নার্সিং হোমের লাইসেন্স বাতিল থেকে শুরু করে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই ঘটনার মাধ্যমে দেশের বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন উঠেছে। জনসাধারণ দাবি তুলেছেন, স্বাস্থ্য পরিষেবায় এমন গাফিলতি কোনওভাবেই বরদাস্তযোগ্য নয়। প্রতিটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের উচিত রোগীর নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। বর্তমানে পুরো ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।