আজকাল ওয়েবডেস্ক: ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই একের পর এক সিদ্ধান্ত। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বারে বারে সমালোচনা হয়েছে তাঁর নিজের দেশেই। এবার ট্রাম্পের কোপে ভারত। এক সময়ে বন্ধু বলা ভারতের উপরে শুল্কের কোপ।

আশঙ্কা ছিল ভারতকে নিয়ে। মাঝে মাঝেই ভারতের প্রতি বাণিজ্য এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আভাস দিলেও, আশঙ্কা ছিলই শুল্কের পরিমানের দিকে। বুধবার জানা গেল, ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন মুলুক। কবে থেকে চালু হবে এই নিয়ম নিয়ম? জানা গিয়েছে, অন্যান্য দেশের মতোই আগামী ১ আগস্ট থেকেই ভারতের উপরেও এই নিয়ম লাগু হয়ে যাবে। 

কিন্তু ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে, আমেরিকায় কোন কোন দ্রব্যের দাম বাড়বে? আমেরিকায় ভারত থেকে কোন কোন দ্রব্য রপ্তানি হয়? রয়টার্সের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, স্মার্টফোন, অটোমোটিভ যন্ত্রাংশ, কাটা ও পালিশ করা হীরা, তৈরি পোশাক এবং ওষুধের ক্ষেত্রে ভারত মার্কিন মুলুকের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী। আমেরিকান সংস্থা এবং গ্রাহকরা এখন এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি কিনতে বেশি খরচের সম্মুখীন হবেন। অর্থাৎ ওই জিনিসগুলি কিনতে বেশি খরচ করতে হবে। 

আরও পড়ুন: প্রশান্ত মহাসাগরের পরেই কি ভারত মহাসাগর? সুনামিতে তলিয়ে যেতে পারে ভারত? সম্পর্কিত-সংস্থা যা জানাল, জেনে নিন এখনই


কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ভারত স্মার্টফোনের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিককালে। অনেক মাঝারি মানের অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং এমনকি অ্যাপলের মতো মার্কিন ব্র্যান্ডের যন্ত্রাংশও ভারতেই তৈরি হয়। 

এই ধরনের আমদানির উপর ২৫% শুল্ক আরোপ মার্কিন মুলুকে স্বাভাবিকভাবেই খরচ বাড়াবে। ইয়েলের বাজেট ল্যাব এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস পূর্বাভাস দিয়েছে যে সম্পূর্ণ শুল্ক ব্যবস্থার অধীনে পোশাকের দাম ১৭% বৃদ্ধি পেতে পারে। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) অনুসারে, এনডিআইএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত জেনেরিক ওষুধের প্রায় ৪০% সরবরাহ করে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং সংক্রামক রোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতীয় জেনেরিক ওষুধের উপর শুল্ক আমেরিকান রোগীদের এবং হাসপাতালের জন্য খরচ বাড়াতে পারে। 

একইসঙ্গে উল্লেখ্য, অটো কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এসিএমএ) অনুসারে, ভারত ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২.২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অটো যন্ত্রাংশ রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, ব্রেক, গিয়ার অ্যাসেম্বলি। 

ভারতের উপর ২৫ শতাংশ কেন শুল্ক আরোপের ভাবনা মার্কিন মুলুকের, ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে তা জানিয়েছেন ট্রাম্প। সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, 'মনে রাখবেন, ভারত আমাদের বন্ধু হলেও, আমরা বছরের পর বছর ধরে তাদের সাথে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি কারণ তাদের শুল্ক অনেক বেশি, বিশ্বের সর্বোচ্চ।  ওদের সঙ্গে ব্যবসার বিষয়ে নানা বিরক্তকর বাধা রয়েছে যার সঙ্গে আর্থিক বিষয়ের কোনও যোগ নেই।' তারপরেই ট্রাম্প লেখেন, 'এছাড়াও তারা সবসময় রাশিয়া থেকে তাদের সামরিক সরঞ্জামের একটি বিশাল অংশ কিনেছে এবং চীনের সাথে রাশিয়ার শক্তির বৃহত্তম ক্রেতা, এমন এক সময়ে যখন সবাই চায় রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুক তখন এসব কিছুই ভাল লাগছে না। তাই এবার থেকে ভারত ২৫% শুল্ক প্রদান করবে, এবং উপরোক্ত বিষয়ে জন্য একটি জরিমানাও দিতে হবে, যা পয়লা আগস্ট থেকে শুরু হবে।'
ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে স্পষ্ট, রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের জন্যই চটেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। উল্লেখ্য, এর আগেই ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখা দেশগুলিকে ভাল চোখে দেখছেন না তিনি। মঙ্গলবারেই বড় আভাস দিয়েছিলেন, ভারতের উপর যে কোনও সময়ে শুক্ল চাপাতে পারে মার্কিন মুলুক।