আজকাল ওয়েবডেস্ক: চিনে সম্প্রতি আশ্চর্য এক ঘটনা করেছে। ৭২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা চিনের হুবেই প্রদেশের শিয়াংইয়াং শহরে বাগানে বসে থাকাকালীন মারাত্মকভাবে পুড়ে যান। খবরে জানা গিয়েছে ৭ জুলাই এই ঘটনা প্রকাশ পায়। দেশজুড়ে এই ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃদ্ধার নাম ওয়াং। তিনি হুবেই প্রদেশের এক বাগানে কাজ করতে গিয়েছিলেন। কাজ করার পর ক্লান্ত হয়ে একটি পাথরের ওপর বসেন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। খবর অনুযায়ী, সূর্যের দাবদাহ এতই তীব্র ছিল যে মুহূর্তের মধ্যে চারিপাশ প্রচণ্ড গরম হয়ে ওঠে। তাঁর পায়ে সমস্যা থাকায় তিনি তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে উঠতে পারেন নি। এহেন পরিস্থিতিতে তিনি তীব্র গরম অনুভব করতে থাকেন। জানা গিয়েছে তাঁর চিৎকার শুনে স্থানীয় বাড়ির এক প্রতিবেশী এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর শরীরে নানা জায়গায় ক্ষত হতে শুরু করে।
মাত্র ১০ সেকেন্ড মতো বৃদ্ধা পাথরে বসেছিলেন। তাতেই তাঁর ত্বক গুরুতরভাবে পুড়ে যায়। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি ব্যথা ও ফোলাভাব অনুভব করেন। পরদিন সকালে তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা জানান, বৃদ্ধার ত্বকে তৃতীয় ডিগ্রির পোড়া ক্ষত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক খবর সূত্রে এও জানা গিয়েছে, এক সাক্ষাৎকারে হাসপাতালের বার্ন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক কিয়ান বেন বলেন, 'তৃতীয় ডিগ্রি তাপে পুড়ে পুরো ত্বক ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এবং এটি ওষুধে সহসা সেরে ওঠে না। আক্রান্ত অংশ কেটে বাদ দিতে হয়। তারপর নতুন ত্বক প্রতিস্থাপন করতে হয়।'
বৃদ্ধা ওয়াং-এর অস্ত্রোপচার সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর ত্বকে গ্রাফটিং করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন বলে সূত্রে খবর। তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হবে তা এখনও জানা যায়নি।
চিকিৎসকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, রোদের মধ্যে পাথর, ধাতব বস্তু ইত্যাদি বিপজ্জনকভাবে গরম হয়ে উঠতে পারে। ফলে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এক মিনিটেই ফোসকা পড়তে পারে। ৬০ ডিগ্রিতে এক মিনিটেরও কম সময়ে পুড়ে যেতে পারে। এমনকি তাপমাত্রা আরও বেড়ে ৭০ ডিগ্রির বেশি হলে কয়েক সেকেন্ডেই ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর চিনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। একজন মন্তব্য করে বলেন, 'আমি একবার অনেকক্ষণ রোদে পড়ে থাকা শেয়ার বাইকে উঠেছিলাম। বাইকটি ছুঁয়ে মনে হয়নি গরম, কিন্তু চালানোর সময় দেখি আমার জিন্স পুড়ে গিয়েছ।' আরেকজন রসিকতা করে লেখেন, 'গত বছর লোকজন বলত, রোদে গরম পাথরে বসলে ঋতুস্রাবের ব্যথা কমে যায়। এবার কেউ আগুনে পুড়ে গেল! পরের বছর কি তবে রোদের তাপে মহাপ্রলয়?”
এমন ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বাস থেকে আরও একটি গুরুতর ঘটনা ঘটেছে চিনের ঝেজিয়াং প্রদেশে। ৬৭ বছর বয়সী এক প্রৌঢ়া দু ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে পিঠ ফিরে বসে ছিলেন। জানা গিয়েছে তাঁর বিশ্বাস ছিল রোদের তাপ ‘ইয়াং শক্তি’কে উত্তেজিত করে রোগ সারায়।
এরপর রোদ থেকে ঘরে ফিরেই তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা জানান, তাঁর ব্রেনে রক্তক্ষরণ ও মারাত্মক ব্রেন হার্নিয়া হয়েছে। জরুরি অস্ত্রোপচারের পরও তিনি কোমায় ছিলেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে বসতে, দাঁড়াতে, কথা বলয়ে ও খেতে শেখেন।
