আজকাল ওয়েবডেস্ক: জরায়ু মুখের ক্যানসার বা সার্ভাইক্যাল ক্যানসার বর্তমান সময়ে মাথাব্যথার কারণ। এই মারণ রোগ মোকাবিলায় করার জন্য উদ্যোগী হল হুগলির পান্ডুয়ার রাধারানী উচ্চ বিদ্যালয়। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি স্কুলের সকল ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সার্ভাইক্যাল ক্যানসার প্রতিরোধমূলক টিকা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে থ্যালাসেমিয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং মহিলাদের সুরক্ষার জন্য আগাম সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে রাজ্যের এই স্কুল। যেখানে বিনামূল্যে এই টিকা দেবে একটি বেসরকারি সংস্থা।
আর এই টিকা কেন প্রয়োজন, নিলে কী হয়, কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা, এসব নিয়েই চিকিৎসক, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা ও চারশোর বেশি পড়ুয়াদের অভিভাবকদের নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় স্কুল প্রাঙ্গণে। ২৬০০ টাকা মূল্যের এই টিকা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাবে পড়ুয়ার।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোনও কোনও সমস্যা থাকলে টিকা দেওয়া যাবে না। শরীরে ইমিউনিটি সিস্টেম কম থাকলে দেওয়া যাবে না এই টিকা। HIV থাকলে দেওয়া যাবে না। জ্বর থাকলে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি হাঁপানির সমস্যা থাকলে দেওয়া যাবে। কোন ওষুধ চললেও দেওয়া যাবে। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর ব্যাথা হতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে জ্বর হতে পারে। একজনের শরীরে এক এমএল দেওয়া যাবে। প্রথম ডোজ দেওয়ার ৬ মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। একদিনে ১৫০ জনকে দেওয়া যাবে টিকা।
অভিভাবক দেবযানী ভট্টাচার্য বলেন, 'মেয়েদের সারভাইকাল ক্যানসারের কথা শুনেছি। কিন্তু এর জন্য যে ভ্যাকসিন রয়েছে সেটা জানা ছিল না। বিষয়টা জেনে ভাল লাগলো। মেয়েকে এই টিকা দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী কিন্তু পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেব।'
শেখ আমজাদ আলি বলেন, 'ক্যানসার একটা জটিল রোগ। এই রোগের ওষুধ পাওয়া জটিল। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মেয়েদের এই টিকা দেওয়া খুবই জরুরি। ডাক্তাররা যেভাবে বুঝিয়েছেন, তাতে আমরা সন্তুষ্ট এবং এই টিকা দেওয়ার জন্য আমরা সকলে আগ্রহী।'
অভিভাবক পায়েল দাস বলেন, 'এর আগেও করোনার ভ্যাকসিন অনেকে নিয়েছে, কিন্তু তাতে সমস্যা হয়েছিল।তাই এই ভ্যাকসিন দেব কি দেব না, এখনও মনস্থির করতে পারিনি। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। যদিও ডাক্তাররা বলছেন যে কোনও সমস্যা হবে না।'
চিকিৎসক প্রকাশ কুমারগিরি জানান, 'সার্ভাইক্যাল ক্যানসার একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। অন্য ক্যানসারের মতো নয়। এই একমাত্র ক্যানসার যা আমরা প্রতিরোধ করতে পারি টিকা দানের মাধ্যমে। ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সে মেয়েদের মধ্যে এই টিকা দেয়া হয়। এই টিকার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। অন্য জায়গায় ইতিমধ্যে আড়াইশো পড়ুয়াকে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ২০০৬ সাল থেকে এই টিকা চালু হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। যদিও ভারতবর্ষে সরকারিভাবে এখনও চালু হয়নি। মহিলাদের জরায়ু ক্যানসারে সহায়তা করে তবে এই টিকা দিতে হবে ৮ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি তাদের কোনও রকম সারভাইকাল ক্যানসার হবে না।'
স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি অসিত চট্টোপাধ্যায় জানান, 'থ্যালাসেমিয়া এবং সারভাইকাল ক্যানসার কতটা ক্ষতিকারক সেটা নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অভিভাবকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এলে তবেই আমরা এই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করব। ২৬০০ টাকা মূল্যের এই ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হবে।'
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা দেবলীনা দাস বলেন, 'মেয়েদের ভবিষ্যতে সুরক্ষার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। থ্যালাসেমিয়ার পরীক্ষা যদি আগে থেকে করা যায় তাহলে অসুস্থতা থেকে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচবে পারবে। সার্ভাইক্যাল ক্যানসার বিশ্বে মারণ রোগ হিসেবে পরিচিত। আমাদের স্কুলের মেয়েরা যাতে এই টিকাটা বিনামূল্যে প্রত্যেকে পায় এবং তাদের ভবিষ্যৎ যেন সুরক্ষিত থাকে।'
