আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার ভোররাতে ফের বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে কোনওরকমে রক্ষা পেল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। জানা গিয়েছে, মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়েতে চাকা পিছলে যায় কোচি থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমানের। ঘটনার সময় শহরে প্রবল বৃষ্টিপাত চলছিল বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, ‘AI 2744’ নম্বরের ওই বিমানটি একটি এয়ারবাস A320 (VT-TYA) মডেলের। এটি কোচি থেকে মুম্বই আসার পথে অবতরণের পর “রানওয়ে এক্সকারশন” অর্থাৎ রানওয়ে থেকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এয়ার ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র জানান, ‘২১ জুলাই ২০২৫ তারিখে কোচি থেকে মুম্বইগামী AI2744 নম্বরের ফ্লাইট রানওয়েতে অবতরণের সময় বৃষ্টির জেরে রানওয়ে এক্সকারশনের ঘটনা ঘটে। তবে, চাকা পিছলে গেলেও বিমানটি নিরাপদে নির্ধারিত বে-তে পৌঁছে যায় এবং সমস্ত যাত্রী এবং ক্রু নিরাপদে বিমানের বাইরে আসেন। কেউ আহত হননি’।
বিমানটিকে আরও পরীক্ষার জন্য গ্রাউন্ড করা হয়েছে বলে খবর বিমানবন্দর সূত্রে। বিমানবন্দরের মুখপাত্র আরও জানান, এদিন বিমান দুর্ঘটনায় বিমানবন্দরের প্রধান রানওয়ের ওপর ছোটখাটো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সব যাত্রী ও ক্রু সদস্যরা নিরাপদ আছেন। রানওয়েতে আংশিক ক্ষতি হয়েছে, তাই বিমান পরিষেবা চালু রাখতে সেকেন্ডারি রানওয়ে চালু করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, মুম্বইয়ে টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন নিচু এলাকায় জল জমে গিয়েছে। জল জমার ঘটনা ঘটেছে বিমানবন্দরের রানওয়ের একাংশেও। এমনকি, টানা বৃষ্টিতে সোমবার সকালে শহরের বিভিন্ন অংশে যানজটও দেখা গেছে বলে জানিয়েছে পুরসভা। তবে বিমান চলাচলে বড় কোনও প্রভাব পড়েনি, তবে কিছু বিমান ছাড়ার ক্ষেত্রে সামান্য দেরি হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দিনগুলিতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যাত্রীদের বিমান চলাচল সংক্রান্ত আপডেট নিয়মিত খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে ২০২৫ সালের ১৪ জুলাই। যখন এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI 171 আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উভয় ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায় এবং বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শহরতলির একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভেঙে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায় বিমানটিতে। ঘটনাস্থলেই মারা যান অধিকাংশ যাত্রী ও ক্রু সদস্য, পাশাপাশি মাটিতে থাকা বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাও হতাহত হন।
স্থানীয় প্রশাসন, দমকল ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে, কিন্তু ততক্ষণে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যায় আশঙ্কাজনকভাবে। দুর্ঘটনার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬০ জন। এটি ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের ঠিক তিন সেকেন্ড পর AI 171 নম্বর ফ্লাইটের উভয় ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখনও পরিষ্কার নয়, ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ হঠাৎ করে নাকি সচেতনভাবে অফ করা হয়েছিল। প্রাথমিক রিপোর্টে পাইলটদের কথোপকথনের একটি অংশ উদ্ধৃত হয়েছে, যেখানে এক পাইলট অপরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি ফুয়েল কেটে দিলে কেন?’ — জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি দিইনি’। তবে পূর্ণ কথোপকথনের ট্রান্সক্রিপ্ট এখনো প্রকাশ পায়নি। এই অস্পষ্টতা ঘিরেই সামাজিক মাধ্যমে নানা জল্পনা ছড়াচ্ছে।
