আজকাল ওয়েবডেস্ক: অভিযোগ ছিল বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে, যৌন হেনস্থার। অভিযোগে নিজের শরীরেই আগুন ধরিয়েছিলেন তরুণী। গত কয়েকদিন ধরে ভুবনেশ্বর এমসের বার্ন আইসিইউতে কঠিন লড়াই চালিয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হল না। মৃত্যু হয়েছে তরুণীর। সোমবার রাত পৌণে বারোটা নাগাদ ওড়িশার ওই কলেজ পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে হাসপাতালের তরফে। একই সঙ্গে হাসপাতালে পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা চালানো হয়েছিল।

 

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন ওই পড়ুয়া।  জুলাই প্রথম কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটির কাছে তরুণী অভিযোগ দায়ের করেন বলে খবর সূত্রের। সেখানেই সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করা হয়। তাতেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ। তারপর থেকে বেশ কয়েকদিন তরুণী এবং তাঁর সহপাঠীরা বিক্ষোভ দেখান। তাতেও কোনও লাভ হয় না। শনিবার একই বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ্যের সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই বেরিয়ে এসে গায়ে আগুন দেন তরুণী। অন্যদিকে তরুণী নিজেকে অগ্নিদগ্ধ করার পর, অভিযুক্ত সমীর কুমার সাহুকে তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

আরও পড়ুন: বিহারে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে অন্তত ৩৫.৫ লক্ষ নাম! ভোটের আগে চাঞ্চল্য...

সূত্রের খবর,তরুণীকে অভিযোগ দায়রের পর থেকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হয়। তাঁর একাডেমিক রেকর্ড নষ্ট করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়। তরুণীর পরিবারের সদস্যের বক্তব্য, অভিযোগ দায়েরে করার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এই অভিযোগ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল।

 

নজর ছিল তাঁর শারীরিক অবস্থার দিকে। আগেই জানা গিয়েছিল কাজ করছে না কিডনি। তা প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা করছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জানা গিয়েছিল তাও। সোমবার তরুণীর ভাই, দিদির শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে জানান, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন বলে জানানো হয়। জানানো হয়, এই সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।  তরুণীর পরিবারের তরফে গোটা ঘটনার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করা হয়েছে আগেই। তরুণীর ভাই সোমবার বলেন, 'অধ্যক্ষ বলেছেন আমার বোন তাঁর মেয়ের মতো, তিনি মামলাটি খতিয়ে দেখবেন। অধ্যক্ষ, প্রশাসনিক স্তরের লোকেরা সকলেই এর জন্য দায়ী। যদি তাঁরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। আমরা দাবি করছি যে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হোক এবং সমস্ত দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক যাতে অন্য কারও বোনের সঙ্গে এমন ঘটনা না ঘটে।' 

 

উল্লেখ্য, ঘটনার দিনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। হাড়হিম করা  ওই ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, তরুণী নিজেকে অগ্নিদদ্ধ করার পর ওই অবস্থায় দৌড়ে চলছেন কলেজ করিডোর জুড়ে। এক যুবক তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আচমকা তাঁর জামাতেও আগুন লাগে, তারপরেই তিনি পিছু হটেন। পরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা আরেকজনও গুরুতর আহত হন। জানা যায়, তাঁর শরীরেরও প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। দু' জনেই ভুবনেশ্বরের এইমস-এ চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার রাতে তরুণীর মৃত্যু হয়। আরেকজন কেমন রয়েছেন? তা জানা যায়নি এখনও। মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি রবিবার হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।