আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের উঠতি টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় এবার মুখ খুললেন অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী জ্যাভেলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া। বৃহস্পতিবার গুরুগ্রামের সুশান্ত লোক-ফেজ ২-এর নিজের বাড়িতেই রাধিকা তাঁর নিজের বাবার গুলিতে নিহত হন। অভিযোগ, মেয়ের সোশ্যাল মিডিয়ায় রিল বানানোর অভ্যাসে অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর বাবা এই চরম পদক্ষেপ নেন। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত বাবা রাধিকাকে লক্ষ্য করে টানা তিনটি গুলি চালান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাধিকাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর নীরজ চোপড়া সংবাদমাধ্যমে জানান, ‘আমি এর আগে কিছুজনের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। হরিয়ানার অনেক মহিলা অ্যাথলিট আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। পরিবারের উচিত মেয়েদের পাশে থাকা, বিশেষ করে যারা খেলাধুলায় ভালো করছে, তাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখা ও সম্মান জানানো উচিত’। পুলিশ আরও জানিয়েছে, রাধিকাকে নিয়ে তার পরিবারের মধ্যে সম্প্রতি তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। তাঁর বাবা মনে করতেন মেয়ের রিল বানানোর প্রবণতা পরিবারের সম্মানহানি করছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ছিল রাধিকার মায়ের জন্মদিন। সেদিনই তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় বাবা। নেপথ্যে কী? তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক তথ্য।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জেরায় দীপক স্বীকার করেছেন মেয়েকে খুন করেছেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, মেয়ে রাধিকার টেনিস অ্যাকাডেমি খুব ভাল চলছিল। তাতেই নানা কটাক্ষ করতে থাকেন পড়শিরা। অনেকেই বলেন, মেয়ের টাকা ভোগ করছেন বাবা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় দীপক জানান, কাঁধে আঘাত পাওয়ার পর তার মেয়ে একটি অ্যাকাডেমি খোলেন। কিন্তু দীপক গ্রামের অর্থাৎ ওয়াজিরাবাদের লোকজন তাঁকে নানাভাবে উপহাস করতেন বলে জানিয়েছেন। তিনি মেয়েকে অ্যাকাডেমি বন্ধ করে দিতেও বলেছিলেন। কিন্তু মেয়ে তাতে রাজি হননি কোনওভাবেই।

তাঁর দাবি, উপহাস, কটাক্ষে জেরবার হয়েই বেছে নিয়েছেন চরম পদক্ষেপ। সম্প্রতি রাধিকা যাদবের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাকে ইনামুল হক নামে এক যুবকের সঙ্গে বাইকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে।সূত্রের খবর, ওই ভিডিও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। দীপক যাদব তা মোটেই পছন্দ করেননি। পুলিশের সন্দেহ, বাবা তার মেয়ের সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা, রিল তৈরি করা এবং বন্ধুদের সঙ্গে জনসমক্ষে ভিডিও বানিয়ে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করায় অসন্তুষ্ট ছিলেন। রাধিকা যাদব ছিলেন রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের পরিচিত টেনিস খেলোয়াড়। একাধিক টুর্নামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করে পুরস্কার জিতেছেন তিনি।

তবে দু’বছর আগে এক গুরুতর চোটের কারণে তাঁকে প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা ছেড়ে দিতে হয়। এরপর থেকে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে নিজের কেরিয়ার গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন। প্রায়শই ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে ভিডিও ও রিল পোস্ট করতেন তিনি। গুরগাঁওয়ের সুশান্ত লোক ফেজ-২। বৃস্পতিবারে সেখানে যা ঘটে গিয়েছে, তা নিয়েই উত্তাল গোটা রাজ্য। রেশ ছড়িয়েছে দেশেও। সেখানেই, নিজের মেয়ে, রাধিকা, যে একজন প্রতিভাবান টেনিস খেলোয়াড়, তাঁকে খুন করেছেন বাবা। গুলি করে, খুন, নিজের মেয়েকেই। স্বাভাবিকভাবেই কোন পরিস্থিতিতে একজন বাবা তাঁর মেয়েকে খুন করেছেন? তা নিয়ে জল্পনা।