আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে ছিলেন সরফরাজ খান ও ঋষভ পন্থ। সরফরাজ দেড়শো রানে ফিরলেন। ঋষভ পন্থ এক রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেন। দুই ব্যাটার মিলে ১৭৭ রান জোড়েন। এই পার্টনারশিপ ভারতকে শক্ত মঞ্চের উপরে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু একটা বড় পার্টনারশিপ ভেঙে গেলে যা হয়, চিন্নাস্বামীতে তাই ঘটল। সরফরাজ ফিরে যাওয়ার পরে ঘরের মাঠে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না লোকেশ রাহুল। চা পানের বিরতির সময়ে ভারতের রান ছিল ৬ উইকেটে ৪৩৮ রান। কিন্তু তার পরে বেশিক্ষণ টিকল না ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। ৪৬২ রানে শেষ হয়ে গেল ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। টিম ইন্ডিয়া এগিয়ে ১০৬ রানে। বেঙ্গালুরু টেস্ট ম্যাচ জিততে নিউজিল্যান্ডের দরকার ১০৭ রান।
বুমরাহদের হাতে কম রানের পুঁজি। এই রান নিয়ে মিরাক্যল কি ঘটাতে পারবে টিম ইন্ডিয়া? ক্রিকেট অবশ্য মহান অনিশ্চয়তার খেলা। ভারতের কাজ কঠিন। তবে মরিয়া একটা চেষ্টা নিষ্চয় করবেন বুমরাহ-সিরাজরা। কিন্তু কিউয়িদের ইনিংসের চতুর্থ বলের পরই মন্দ আলোর জন্য খেলা বন্ধ করে দেন দুই ফিল্ড আম্পায়ার। তাঁদের সিদ্ধান্তে বেজায় রেগে যান বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। এর কিছুক্ষণ পরেই প্রবল বৃষ্টি নামে বেঙ্গালুরুতে। চতুর্থ দিনের খেলা নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করে দেওয়া হয়। আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের পরে অবশ্য বৃষ্টি থেমে যায়। আরও আধ ঘণ্টা খেলা হতেই পারত। পিচের সুবিধা নিতে পারতেন ভারতের বোলাররা। সেই সুবিধা না পাওয়ায় চটে যান ভারত অধিনায়ক। কিউয়িরা দ্বিতীয় ইনিংসে কোনও রান তুলতে পারেনি। পঞ্চম দিন সবার নজরে থাকবে চিন্নাস্বামী।
এদিকে চতুর্থ দিন সকালের শুরুটা যেভাবে হয়েছিল, শেষটা সেভাবে হল কোথায়! মারকুটে মেজাজে ব্যাট করেন সরফরাজ ও পন্থ। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময়ে ভারতের রান ছিল ৩৪৪/৩। তখনই মধ্যাহ্নভোজের ঘোষণা করা হয়। সেই সময়ে ভারত পিছিয়ে ছিল মাত্র ১২ রানে। সরফরাজ অপরাজিত ছিলেন ১২৫ রানে। অন্যদিকে পন্থ ৫৩ রানে ক্রিজে ছিলেন। খেলা যত গড়াতে থাকে সরফরাজ ও পন্থ ততই অন্য অবতারে ধরা দিতে থাকেন।
খেলার দ্বিতীয় দিন জাদেজার বলে কিপিং করার সময় ডান হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন পন্থ। ফলে তৃতীয় দিন কিপিং করতে পারেননি। চতুর্থ দিন তিনি ব্যাট হাতে একেবারে স্বমহিমায়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তনের টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। এদিন পন্থের ভাগ্য খারাপ। ৯৯ রানে ফিরে যান তিনি।
অবাক করলেন সরফরাজ। পরিণত ব্যাটারের মতো ভারতের ইনিংস টেনে নিয়ে গেলেন। ২০১৪ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল সরফরাজের। দু’টি অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন। ২০০৯ সালে হ্যারিস শিল্ডের একটি ম্যাচে ৪৩৯ রান করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এরপরই সরফরাজকে মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে নেওয়া হয়। সেখানে ভাল খেলে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সরফরাজের ৫৬৬ রান তৃতীয় সর্বোচ্চ।
তাঁর জীবনে বিতর্কও কিছু কম নয়। বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগে তাঁকে সাসপেন্ড করেছিল মুম্বই ক্রিকেট সংস্থা। শৃঙ্খলাজনিত কারণে এমসিএ–র ইন্ডোর অ্যাকাডেমি ক্যাম্প থেকেও নির্বাসিত করা হয় তাঁকে। ২০১৪–১৫ মরসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর ম্যাচ ফি আটকে রাখা হয়েছিল। অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটের একটি ম্যাচে নির্বাচকদের উদ্দেশে কিছু অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন তিনি। ২০১৪–১৫ মরসুমের পরেই সরফরাজ মুম্বই ছেড়ে উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলতে চলে যান। সেখানে দু’টি মরসুম কাটালেও সাফল্য আসেনি। ২০১৯–২০ মরসুমে তিনি ফিরে আসেন মুম্বইয়ে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সরফরাজকে। ক্রমাগত রান করে যান তিনি।
চলতি বছরের শুরুতে জাতীয় দলে অভিষেক হয় সরফরাজের। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন তিনটি টেস্ট। কিউয়িদের বিরুদ্ধে এটাই তাঁর কেরিয়ারের চতুর্থ টেস্টে। সেই টেস্টে বড় সেঞ্চুরি পেলেন। তবে আউট হওয়ার পরে সন্তুষ্ট দেখায়নি তাঁকে। শ্যাডো করতে করতে বেরিয়ে যান তিনি। একই ভুল পরের বার আর না করার প্রায়শ্চিত্ত বুঝি করে গেলেন সরফরাজ।
কিন্তু এর পরেও বাকিদের কাছ থেকে প্রতিরোধ তো পাওয়া গেল না। ঘরের মাঠে ব্যর্থ লোকেশ রাহুল (১২)। জাদেজা (৫), অশ্বিন (১৫), বুমরাহ (০) ও সিরাজ (০) এলেন আর গেলেন। ভারতও থমকে গেল ৪৬২-তে।
