আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘড়ির কাঁটায় তখন ৫.২০ মিনিট। বেলেঘাটা ক্রসিং পেরিয়ে দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ্য। দু'জন বাইকে। গন্তব্য যুবভারতী। এটা শুনে মনে হতেই পারে, এ আবার নতুন কী! কিন্তু টুইস্ট এখানেই। যে বাইক চালাচ্ছিলেন, তিনি ইস্টবেঙ্গল জার্সি পরিহিত। বাইকের সওয়ারি মোহনবাগান সমর্থক। হাতে সবুজ মেরুন পতাকা। দু'জনের মুখেই হাসি। সঙ্গে একে অপরের প্রিয় দলের জন্য স্লোগান। দশ বছর আগেও কি এই চিত্র ভাবা যেত? দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে চলত বাকযুদ্ধ, চলত ছড়ার লড়াই। এদিনও সেটা অব্যাহত ছিল। কিন্তু তারমধ্যেই সম্পূর্ণ অন্য ছবি। ভ্রাতৃত্বের চিত্র। যা আগে ভাবাই যেত না। তবে দীর্ঘদিন পর ডার্বিতে ফেরে পুরোনো ছবি। বাইপাসে বিকেল পাঁচটা থেকে ম্যাটাডোর ভরিয়ে ইস্ট-মোহন সমর্থকদের আনাগোনা। বেশ কয়েক বছর যা দেখা যায়নি।
দু'বছর পর ডুরান্ড ডার্বি। আগের বছর অভয়া কাণ্ডের জন্য বড় ম্যাচ বাতিল হয়ে যায়। তার আগের বছর টিকিট নিয়ে তুলকালাম হওয়া সত্ত্বেও গ্যালারি পুরো ভরেনি। কিন্তু রবিবাসরীয় রাতে যুবভারতী হাউজফুল। কানায় কানায় ভরা। প্রায় ৬০ হাজার দর্শক। সঙ্গে গ্যালারিতে বেশ কয়েকটা টিফো। 'মাঝি ধরল হাল, নৌকা তুলল পাল।' 'বল ছিড়ল জাল, নিভল ভাঙা মশাল।' 'ও দাদা পাস না অনার্স?' ডার্বি শুরুর আগেই উত্তেজিত যুবভারতী। সাধারণত ম্যাচের মাঝে জলে মোবাইল জোনাকি। কিন্তু এদিন ডার্বি শুরুর আগেই স্টেডিয়ামে জ্বলল জোনাকি। কামিন্স, মিগুয়েলরা ওয়ার্মআপ করতে নামা মাত্র তেতে ওঠে গ্যালারি।
বহু প্রতিক্ষিত ডুরান্ড ডার্বি। কয়েকদিন আগে অবশ্য কল্যাণী স্টেডিয়ামে কলকাতা লিগের ডার্বি হয়েছে। কিন্তু সেটি ছিল আলুনি ডার্বি। মূলত অনূর্ধ্ব-২৩ দলের প্রতিযোগিতা। এদিনের ডার্বি আসল ডার্বি। দু'দলই পূর্ণশক্তির দল নামায়। এই ডার্বি ঘিরে সমর্থকদের মনে দুর্গাপুজোর ঢের আগেই ঢাকে কাঠি পড়েছে। কলকাতার ডার্বি যেন এক উৎসব। সাধারণত বড় ম্যাচে বাড়িতে বাড়িতে সবুজ মেরুন কিংবা লাল হলুদ পতাকা ঝোলে। চায়ের দোকানে চলে গুলতানি। মোহনবাগান জিতলে বাজারে গলদা চিংড়ি সস্তা হত। ইস্টবেঙ্গল জিতলে ইলিশ। ঘটি বাড়িতে খেলার দিন ইলিশ ঢুকতো না, বাঙাল বাড়িতে চিংড়ি। একসময় মোহনবাগান ডার্বি জিতলে পাড়ায় পাড়ায় শোভাযাত্রা হত। ডার্বির দিন বাইপাস দিয়ে ছোট হাতি ভর্তি সমর্থক যেত যুবভারতীতে। বাজতো ভেপু, ড্রাম। সমর্থকদের মুখে প্রিয় ক্লাবের রং। নানা ধরণের চুলের ছাট। কলকাতার ডার্বির উন্মাদনার সঙ্গে তুলনা করা যেত বার্সিলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ বা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড এবং ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ম্যাচের উন্মাদনার সঙ্গে। দীর্ঘদিন পর ফিরল পুরোনো চিত্র। রবিবাসরীয় ডার্বি অনেকটাই ফিরিয়ে দিল অতীতকে।
