কৌশিক রায়: শেষের বাঁশি বাজতেই কল্যাণী স্টেডিয়ামের বক্সে বেজে উঠল,''জার্সি মানেই আমার মা...।'' আর হবে নাই বা কেন! মোহনবাগানকে হারিয়ে মরশুমের প্রথম ডার্বি জিতে নিল ইস্টবেঙ্গল। শক্তিশালী দল, প্রায় সব পজিশনে সিনিয়র দল থেকে ফুটবলার নেওয়া কাজে দিল ইস্টবেঙ্গলের।মরশুমের শুরুতেই টানটান ম্যাচে ডার্বি জয়। এই জয় যে আগামী ম্যাচগুলোতে বড় আত্মবিশ্বাস জোগাবে, তা বলাই বাহুল্য।
গত কয়েক ম্যাচে হারের পরেও এদিন দুর্দান্ত ভাবে কামব্যাক করল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের স্কোরলাইন ৩-২। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করলেন জেসিন টিকে, সায়ন ব্যানার্জি এবং ডেভিড লালনসঙ্গা। তবে ৯০ মিনিট জুড়ে একাধিকবার মোহনবাগানের ডিফেন্স চুরমার করে দিয়েও গোলের সংখ্যা মাত্র ৩টে। আরও কয়েকটা গোল হতেই পারত। ম্যাচের সেরা হলেন সায়ন ব্যানার্জি। এদিন ডার্বির জন্য সিনিয়র দল থেকে একাধিক ফুটবলার নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সেটা যে কতটা কার্যকরী তা এদিন প্রমাণ হয়ে গেল। প্রথমার্ধের শুরু থেকেই বাগানের বক্সে আক্রমণ শুরু করে ইস্টবেঙ্গল।

একে তো দীপেন্দু ছাড়া সবুজ-মেরুন রক্ষণে সেভাবে অভিজ্ঞতা নেই। তার উপর লাল হলুদের আক্রমণ ভাগ এদিন ছিল বেশ শক্তিশালী। একদম শুরুতেই বাগানের বক্সে ক্রস রেখেছিলেন সায়ন। সাজানো ভলি মিস করে যান এডমুন্ড। তবে গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ইস্টবেঙ্গলকে। আট মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে পাস খেলে ওঠেন এডমুন্ড এবং সায়ন।
আরও পড়ুন: পন্থের চোটের পর ক্রিকেটে এই নিয়ম আনতে চলেছে আইসিসি
সায়নের মাইনাস থেকে সহজেই গোল করে যান জেসিন টিকে। কিন্তু গোলের পর তিনি বেশিক্ষণ খেলতে পারেননি। চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলে তাঁর জায়গায় নামেন মার্ক জোথানপুইয়া। এক গোলের পরেও লাল-হলুদের আক্রমণের ঝাঁজ কমেনি একটুও। দ্বিতীয় গোল এল আরও সহজে। বক্স থেকে সোজা বল বাড়ান মার্ক। বাড়ানো বল ধরেন এডমুন্ড। তাঁর মাইনাস থেকে বাগান কিপারকে মাটিতে শুইয়ে গোল করে যান সায়ন ব্যানার্জি।

গোটা ম্যাচ জুড়ে তাঁর দাপট ছিল দেখার মতো। এদিন ধারেভারে ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে থাকলেও দুর্দান্ত ভাবে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরে মোহনবাগান। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ৫৩ মিনিটে কিয়ানের ক্রস থেকে বল নামান দীপেন্দু। সেই বল বক্সের ভিতর থেকে জালে জড়িয়ে দেন লিওয়ান কাস্তানা। ৬৭ মিনিটে সমতা ফেরায় মোহনবাগান। লাল হলুদের বক্সের বাইরে ভুল করেন সায়ন। সেই বল থেকে কাস্তানার ক্রসে হেড দিয়ে গোল করে যান কিয়ান নাসিরি।
এদিন মোহনবাগানের হারের মূলে ছিল জঘন্য ডিফেন্স। লাল-হলুদের শক্তিশালী আক্রমণভাগের কোনও জবাব ছিল না তাদের কাছে। যার ফলে ৬৯ মিনিটে আমন সিকের বাড়ানো বল থেকে একদম ফাঁকায় গোল করে যান ডেভিড লালানসাঙ্গা। জার্সি খুলে বাগান গ্যালারির সামনে গিয়ে তাঁর সেলিব্রেশন ছিল দেখার মতো। সিনিয়র এবং জুনিয়র ফুটবলারদের দিয়ে ভাল দল গড়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সেখানে ডিফেন্সের ভুলচুকের খেসারত দিতে হয়েছে বাগানকে।

তবে গতবারের কলকাতা লিগে ডার্বির চেয়ে এবারের ম্যাচ অনেক জমজমাট। ফুল হাউজ কল্যাণী স্টেডিয়ামে জমিয়ে খেলা দেখলেন সমর্থকরা। দুর্দান্ত পরিবেশ ছিল কলকাতা ডার্বির জন্য। অতিরিক্ত সময়ে আলো নিভে গিয়েছিল। তার মধ্যেই শেষ কয়েক মিনিট খেললেন ফুটবলাররা। তবে ম্যাচের মধ্যে এদিন চোট পেলেন একাধিক ফুটবলার। চোট পেয়ে প্রথমার্ধেই মাঠ ছাড়েন মোহনবাগানের সালাউদ্দিন। দ্বিতীয়ার্ধে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় সায়নকেও। তবে নিরাপত্তা, ডার্বি আয়োজনে এদিন সহজেই পাশ করে গেল কল্যাণী তা বলাই যায়। সম্পূর্ণ আলাদা রাস্তা দিয়ে দুই দলের সমর্থকদের ঢোকানো, আলাদা ব্লক করে দেওয়া, গ্যালারিতে পুলিশ সব মিলিয়ে জমজমাট কলকাতা ডার্বি। আর চিরআবেগের বড় ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল জেতায় কলকাতা লিগে জমি অনেকটাই ফেরত পেল বলা যায়।
আরও পড়ুন: নিজের দোষেই চোট পেল পন্থ, বলছেন এই প্রাক্তন ইংরেজ ক্রিকেটার
