আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকাল থেকে সন্ধ্যা- অফিসের চার দেওয়াল, কম্পিউটারের নীল আলো আর কাজের পাহাড়প্রমাণ চাপ। কৃত্রিম আলো আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের একঘেয়ে পরিবেশে মন ও শরীর, দুই-ই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই নিষ্প্রাণ রুটিনে যদি এক ঝলক সতেজতা আনা যায়, তবে কেমন হয়? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সমাধান রয়েছে আপনার কাজের ডেস্কের এক কোণেই। লাগিয়ে ফেলুন একটি ছোট্ট গাছের চারা। একটি ছোট্ট সবুজ গাছই আপনার কর্মজীবনকে সতেজ করে তুলতে পারে ম্যাজিকের মতো।

 

বিষয়টি কেবলই চোখের আরাম বা অন্দরসজ্জা নয়, এর পিছনে রয়েছে একাধিক বৈজ্ঞানিক কারণ। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কাজের জায়গায় সবুজ গাছের উপস্থিতি কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

 

ডেস্কে গাছ রাখার উপকারিতা কী কী?

১। মানসিক চাপ কমায়: সবুজের দিকে তাকালে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হয়। ‘জার্নাল অফ ফিজিওলজিক্যাল অ্যানথ্রোপলজি’-তে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, ডেস্কে গাছ থাকলে তা কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমে আসে।

২। মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, যে কর্মক্ষেত্রে গাছ রয়েছে, সেখানে কর্মীদের কাজের মান এবং মনঃসংযোগের মাত্রা অনেকটাই বেশি। গাছের উপস্থিতি একঘেয়েমি কাটিয়ে সৃজনশীল ভাবনাকে উস্কে দেয়, যা আখেরে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৩। বায়ু পরিশোধন: নাসা-র গবেষণা অনুযায়ী, বেশ কিছু ইন্ডোর প্ল্যান্ট অফিসের ভিতরের বাতাসকে বিশুদ্ধ করতে সক্ষম। এগুলি বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি ফর্মালডিহাইড, বেনজিন এবং জাইলিনের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক শোষণ করে নেয়। ফলে ফুসফুসে তাজা বাতাস পৌঁছয়, যা শারীরিক সুস্থতার জন্য জরুরি।

৪। চোখের আরাম: একটানা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে যে চাপ পড়ে, তাকে ‘ডিজিটাল আই স্ট্রেন’ বলা হয়। প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ২০ সেকেন্ডের জন্য ডেস্কের সবুজ গাছটির দিকে তাকালে তা চোখের পেশিকে আরাম দেয় এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে।

 

ডেস্কের জন্য আদর্শ গাছ কোনগুলি?

অফিসের ডেস্কে রাখার জন্য এমন গাছ বাছতে হবে, যার জন্য খুব বেশি আলো বা যত্নের প্রয়োজন হয় না।

১। স্নেক প্ল্যান্ট: এই গাছটি অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু। খুব কম আলো এবং অল্প জলেই বেঁচে থাকতে পারে। বাতাস পরিষ্কার করতে এর জুড়ি মেলা ভার।

২। মানি প্ল্যান্ট: মাটি বা জল, দুই জায়গাতেই এই গাছ খুব সহজে বেড়ে ওঠে। অফিসের অল্প আলোয় রাখার জন্য এটি আদর্শ।

৩। জেড প্ল্যান্ট: এই সাকুলেন্ট গাছটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। খুব সামান্য জল লাগে, রোপণ করাও সহজ।

৪। স্পাইডার প্ল্যান্ট: কম আলোতে বেড়ে ওঠা এই গাছটিও বাতাস থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করতে ওস্তাদ।

৫। লাকি ব্যাম্বু: কাচের পাত্রে জলে ডুবিয়ে রাখা এই গাছ ডেস্কের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এর জন্য বিশেষ যত্নেরও প্রয়োজন হয় না।

 

সব মিলিয়ে ডেস্কে একটি জীবন্ত গাছ রাখা শুধুমাত্র শখ নয়, সামান্য খরচে এই ‘সবুজ বন্ধু’ আপনার কর্মজীবনে সজীবতার পরশ এনে দেবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।