আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ভ্রমণপ্রেমীদের মনে সবসময়ই এক ‘গ্লোবট্রটিং’ (globetrotting) মানসিকতা কাজ করে—একটি হঠাৎ উইকেন্ড ট্রিপ বা মাসে অন্তত একবার বেরিয়ে পড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পাহাড় বা সমুদ্র, কিংবা একা একটুখানি শহর পালটে নেওয়া—এসবই জীবনের প্রাণ। সেই ‘হ্যাঁ বলার’ রোমাঞ্চ—জানালা দিয়ে ঢোকা হাওয়া যেদিকে ডাকছে, সেদিকেই চলা—এই স্বাধীনতাই ভ্রমণের মূল চালিকাশক্তি।

কিন্তু ঘুরতে বেরোনোর আগে একটাই জায়গায় এসে সেই উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়ে—প্যাকিং।
স্যুটকেস গুছোতে গিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ—চেন আটকে যাচ্ছে, জামা ঢুকছে না, কি ফেলা হবে আর কি রাখা হবে তা নিয়ে দ্বিধা, আর তার সঙ্গে চেনা শারীরিক যন্ত্রণা—কাঁধে ব্যথা, হাত ধরেছে, ঘাম ঝরছে। এই সব সমস্যার সমাধান হয় যদি আপনি জানতে পারেন ‘স্মার্ট প্যাকিং’-এর কৌশল।

আরও পড়ুন: রাতের বিছানায় ওইটা না দেখলে ঘুম আসেনা? এখনই বন্ধ করুন! অজান্তেই ডেকে আনছেন স্নায়ুরোগ!

এই বিষয়েই সম্প্রতি এক বিস্তারিত সাক্ষাৎকারে ১৩টি কার্যকরী প্যাকিংয়ের টিপস দিলেন জোস্টেল-এর সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ধরমবীর সিং চৌহান। তাঁর কথায়, “আজকাল ভ্রমণ শুধুই একটা জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে এক অভিজ্ঞতা সংগ্রহের যাত্রা। আর এই অভিজ্ঞতাকে যতটা সম্ভব মুক্ত এবং হালকা করে তুলতে পারলেই আমরা প্রকৃত অর্থে ভ্রমণের আনন্দ পেতে পারি।” তিনি আরও বলেন, “যত হালকা হবে ব্যাগ, ততই হালকা হবে মন। আপনি আরও বেশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নতুন মানুষ, সংস্কৃতি আর পরিবেশের মুখোমুখি হতে পারবেন।”

চলুন দেখে নেওয়া যাক, কী কী সহজ নিয়ম মানলে আপনি ‘ভ্রমণ’কে আবার উপভোগ্য করে তুলতে পারেন:

১. কম নিন, কিন্তু দরকারি নিন

মনেই ঠিক করুন আপনি কি ব্যবহার করবেন। ‘হয়তো লাগবে’ এমন চিন্তা বাদ দিন।

২. ব্যাগই তো পথের সঙ্গী

বড় ব্যাগ নয়, বরং কার্যকর, হালকা ও সহজে বয়ে নেওয়া যায় এমন ব্যাগ বেছে নিন।

৩. একটা তালিকা বানান

আগে থেকেই ফোনে বা ডায়েরিতে একটি তালিকা তৈরি করুন এবং প্যাকিংয়ের সময় দু-একটি ‘nice to have’ জিনিস বাদ দিন।

৪. পরিস্থিতি বুঝে জামা নিন

একটা জামা একাধিক পরিস্থিতিতে ব্যবহারযোগ্য কিনা দেখুন। সাজানো সাজানো পোশাকের বদলে কার্যকর পোশাকই কাজের।

৫. মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করতেই শিখুন

নিউট্রাল রঙ, লেয়ারিংয়ের সুবিধা, স্কার্ফের বহুমুখী ব্যবহার—এসব মিলে আপনাকে অল্প জামাতেই বহু স্টাইলের সুযোগ দেয়।

৬. টয়লেটরিজ ছোট করুন

পছন্দের শ্যাম্পু বা লোশন ছোট বোতলে ভরে নিন। জেল টাইপ প্রোডাক্ট নিন, যাতে ছড়িয়ে না পড়ে।

৭. রোলিং ও প্যাকিং কিউব

জামাকাপড় রোল করে রাখলে জায়গা বাঁচে। প্যাকিং কিউব বা কম্পার্টমেন্টে রাখলে খুঁজতে সহজ হয়।

৮. প্রযুক্তির ব্যবহার হোক সীমিত

স্মার্টফোনই যথেষ্ট। চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক রাখুন, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় গ্যাজেট নয়।

৯. ভারী জিনিস পরে নিন

ট্রাভেল করার সময় ভারী জ্যাকেট, জুতো পরে নিন। এতে ব্যাগ হালকা থাকে।

১০. লন্ড্রির পরিকল্পনা করুন

অল্প জামা নিয়ে বেরিয়ে মাঝপথে ধোয়ার ব্যবস্থা রাখলে জায়গা বাঁচে।

১১. ডিজিটাল ডকুমেন্টস

টিকিট, বুকিং, আইডির ছবি মোবাইলে রাখুন; প্রিন্ট করা কাগজ নয়। ক্লাউডেও ব্যাকআপ দিন।

১২. পরিবেশবান্ধব প্যাকিং

একটা রিইউজেবল পানির বোতল, স্টিল স্ট্র, বা কাপড়ের ব্যাগ আপনার ব্যাগকেও হালকা রাখবে, পরিবেশকেও।

১৩. একটা ‘এসেনশিয়ালস’ পাউচ রাখুন

পাসপোর্ট, ফোন, টিকিট, চার্জার ও একটু নগদ—সব এক জায়গায় থাকলে জরুরি মুহূর্তে পকেট হাতড়াতে হয় না।

এই ১৩টি নিয়ম অনুসরণ করলে আপনি বুঝতে পারবেন, ভ্রমণ মানেই এক বিশাল লাগেজ নয়। বরং হালকা ব্যাগ, হালকা মন ও মুক্ত গতিই আপনাকে প্রকৃত অর্থে বিশ্বদর্শনের পথে নিয়ে যাবে।
প্যাকিং সঠিকভাবে করতে পারলে একরাশ চিন্তা দূর হয়ে যায়। ধরমবীর সিং চৌহানের কথায়, “প্যাকিং কেবল একটা প্রক্রিয়া নয়, এটি এক অভ্যাস। এবং এই অভ্যাস তৈরি হলে আপনি আর কখনও ব্যাগ টানতে টানতে ক্লান্ত হবেন না—বরং প্রতিটি গন্তব্যে পৌঁছবেন খোলা মন আর মুক্ত হাসি নিয়ে।” পরবর্তী ভ্রমণে রওনা দেওয়ার আগে একবার মনে করে নিন এই টিপসগুলো—আপনার যাত্রা হয়ে উঠুক আরও মসৃণ, আরও আনন্দময়।