পোশাক গল্প বলে। আলমারির তাকে রাখা প্রিয় শাড়ি হোক বা প্রথম ডেটে পরা টি শার্ট, সবেতেই জড়িয়ে থাকে অগুনতি স্মৃতি, ভাললাগার আখ্যান। তাই ঠিক পোশাক বেছে নেওয়াটাও জরুরি কাজ বৈকি! এবার সেই কাজই আরও সহজ করে দিল অমলতাস ক্যাফে অ্যান্ড স্টুডিও আয়োজিত ‘থ্রেডস অফ ফ্রিডম’ প্রদর্শনী। নরম খাঁটি সুতি থেকে অসমের হাতে বোনা এরি সিল্ক, মনের মতো পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে তোলার সুযোগ এনে দিল সল্টলেক সেক্টর ৩-এ সবুজে মোড়া এই ঠিকানা। সৌজন্যে অর্ণব সেনগুপ্ত এবং ঈপ্সিতা সেনগুপ্ত।
পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার অর্ণব এবং তাঁর স্ত্রী টেক্সটাইল ডিজাইনার ঈপ্সিতার যৌথ প্রয়াসে তৈরি অমলতাস। ভাল খাবারের পাশাপাশি দক্ষ শিল্পীদের হাতে তৈরি জিনিসও মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া তাঁদের লক্ষ্য। সকলেই যাতে সাধ্যের মধ্যে ভাল মানের পোশাক পান, সেই ভাবনা থেকেই এই প্রদর্শনীর জন্ম। ঈপ্সিতার কথায়, “মধ্য এবং দক্ষিণ কলকাতায় প্রচুর প্রদর্শনী হয়। সল্টলেকে এখনও সেই চল শুরু হয়নি। পুজোর আগে অনেককেই বলতে শুনি ভাল পোশাক-গয়না কেনার জন্য অনেকটা সময় ব্যয় করে তাঁদের সেখানে যেতে হয়। তাই আমাদের মনে হল নতুন প্রজন্মের ডিজাইনারদের নিয়ে একটা প্রদর্শনী করলে সেই সমস্যার সুরাহা হতে পারে। তাঁদের প্রতিভাও সকলে চাক্ষুষ করতে পারবেন।” তবে শুধু নতুনরাই নন, এই প্রচেষ্টার অংশ হয়েছেন অভিজ্ঞরাও।
বর্তমানে বাজারচলতি পোশাকে খাঁটি ফ্যাব্রিক পাওয়া কঠিন হতে পারে। বাইরে থেকে আমদানি করা সিন্থেটিক সুতো তার মূল কারণগুলির মধ্যে একটি। পেশার সুবাদে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে বহু দিন ধরেই অবগত অর্ণব এবং ঈপ্সিতা। কোনও রকম ভেজাল ছাড়াই উন্নত মানের কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চান ডিজাইনার দম্পতি। অর্ণবের কথায়, “আমরা যখন এই ক্যাফে শুরু করেছিলাম, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল হ্যান্ডলুমের তৈরি কাপড়, হাতে তৈরি নানা জিনিস সকলের কাছে পৌঁছে দেব। ফ্যাশনে আমরা এখন টেকসই পোশাক মানে সাসটেইনিবিলিটির কথা বলি, যাতে আমাদের পরিবেশ ভাল থাকে। কিন্তু আমি করি, পুরনো জামা কেটে নতুন জামা তৈরিই শুধু সাসটেইনিবিলিটি নয়। কোভিডে যে সব বয়নশিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোও তা-ই। পোশাক তৈরির শুরু থেকেই যদি আমরা অরগ্যানিক উপাদান যেমন সিল্ক, কটন, জুট, লিনেনের ফ্যাব্রিক ব্যবহার করি, তা হলেই সেটা পরিবেশ বান্ধব হয়ে উঠবে। পাশাপাশি সেই পোশাকগুলি আমরা এমন দামে বিক্রি করার চেষ্টা করি, যা মধ্যবিত্তের নাগালে থাকবে।”

প্রদর্শনীতে ছিল হাউজ অফ নুরি, অ্যাসারশন স্ট্রিট, হাওড়া ব্রিজ, অ্যান্ড শিবোরি, রিক্রিয়েশন, মেঘনা মিত্র এবং সৃষ্টির মতো ব্র্যান্ড। খাঁটি সুতির তৈরি শাড়ি-ব্লাউজ থেকে অসমের মেখলা, শিশুদের ফ্রক, ধুতি-পাঞ্জাবি, নানা ডিজাইনের টি শার্ট, একই ছাদের তলায় মিলছে সব ধরনের পোশাক।
হাউজ অফ নুরি-র মালিক প্রেরণা চৌধুরি জানান, অসমের গ্রামের মহিলাদের বাড়িতে থাকা লুমেই তৈরি হয় তাঁর ব্র্যান্ডের পোশাক। পুরো কাজটাই করেন সেখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। মেখলা এবং শাড়িই এই ব্র্যান্ডের মূল আকর্ষণ। একে ‘ড্রেপ থেরাপি’ বলছেন প্রেরণা।

অন্য দিকে, ‘হাওড়া ব্রিজ’-এ মিলছে সুতির তৈরি অভিনব ডিজাইনের সব ব্লাউজ। শাড়ির সম্ভারও চোখে পড়ার মতো। মালিক শম্পা দত্তগুপ্তের কথায়, “আমি চাই, আমাদের পোশাকের মাধ্যমে কলকাতার নাম যেন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই ব্র্যান্ডের নাম রাখা হয়েছে হাওড়া ব্রিজ।”

মা হওয়ার পর দুই বোন সুদেষ্ণা দত্ত এবং সুচন্দ্রা ভান্ডারি তৈরি করেছেন ‘রিক্রিয়েশন’। সঙ্গী তাঁদের বন্ধু দেবারতি চক্রবর্তী। সুদেষ্ণার কথায়, “মা হওয়ার পর যখন সন্তানদের জামা কিনতে যেতাম, দেখতাম বেশিরভাগ পোশাকই তৈরি পশ্চিমী কায়দার আদলে। সেখান থেকেই ভাবি ভারতীয় ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলে এমন সব পোশাক যদি শিশুদের জন্য তৈরি করা যায়, তা হলে কেমন হয়! সেই ভাবনা থেকে এই ব্র্যান্ডের উত্থান। সুকুমার রায়ের কবিতা, সহজ পাঠের নস্টালজিয়া ফিরিয়ে আনতে চাইছিলাম। মূলত কটনের উপর ট্রেডিশনাল স্টিচিং, ব্লক প্রিন্টিং করে পোশাক তৈরি করি আমরা।”
