বর বড্ড বদরাগী! পান থেকে চুন খসলে একগাদা কথা শোনায়। রাগ বাড়লে গালিগালাজ, গায়ে হাত তোলা থেকে জিনিসপত্র ভাঙচুরও আটকায় না!
মেয়েটার একেবারে নাকের ডগায় রাগ! কথায় কথায় রাগ, বিরক্তি, একটুতেই ঝগড়াঝাঁটি শুরু!
ছেলেটা রাগ, তিক্ততা জমিয়ে রাখে দিনের পর দিন। মন খুলে সবটা উগরে না দিয়ে রাগের পাহাড় বয়ে চলে মনের ভিতর। 
প্রেমিক বা প্রেমিকা রেগে গেলেই অসম্ভব ঠান্ডা। ঠান্ডা গলায় বিঁধে চলে। উল্টো দিকের মানুষটার খারাপ লাগা, রাগ, কোনও কিছুই গুরুত্ব পায়না তখন।    
অফিসের বস বলে কথা। যখন তখন তুমুল গালাগালি করেন টিমকে। সেই ত্রাসেই দিন কাটে বাকিদের। 
উপরের চরিত্রগুলো চেনা লাগছে তো?  সকলের চারপাশেই, চেনা চৌহদ্দিতে এমন মানুষেরা থাকেন। ষড়রিপুর এক রিপু ক্রোধ অর্থাৎ রাগ। এমনিতে রাগ জিনিসটা একটা সাধারণ অনুভূতি, সবারই থাকে কমবেশি। কিন্তু তা যদি মাত্রা ছাড়ায়? তবে কি আর তাকে সাধারণ বলা চলে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্রাছাড়া রাগ, যা অন্যদের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে, তা আসলে মানসিক সমস্যা। এর অর্থ মনের ভিতর বাসা বেঁধে আছে রাগ। ইংরেজিতে যাকে বলে অ্যাঙ্গার ইস্যুজ়। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন আপনি এ সমস্যায় আক্রান্ত কিনা? কীভাবেই বা তার উপশম হতে পারে?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাঙ্গার ইস্যুর কিছু উপসর্গ রয়েছে। যা খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, আপনারও এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে কিনা। সেক্ষেত্রে কিছু অভ্যাস মুশকিল আসান হতে পারে। তবে সমস্যা বেশি হলে মনোবিদ বা মনোরোগ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া জরুরি।

রাগের সমস্যার রকমফের

•    সামান্য কিছু ঘটলেই অসম্ভব বিরক্ত হওয়া, চেঁচামেচি
•    একটুতেই বা অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ পরিস্থিতিতেও অস্থির হয়ে পড়া
•    যে কোনও ধরনের তর্ক-বিতর্ক বা ঝগড়ায় মাথা ঠান্ডা না রাখতে পেরে বাড়তি চেঁচামেচি, গালিগালাজ, টেনশন এবং হতাশা
•    অসম্ভব রাগে অন্যের গায়ে হাত তোলা, জিনিসপত্র ভাঙচুর, ভয় দেখানো বা ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া
•    নিয়মিত অন্যকে কঠিন কথা বলা, চিৎকার, গালিগালাজ
•    সবেতেই ত্রুটি ধরা বা অন্যের সব ব্যবহারকেই ভুল বলে দাগিয়ে দেওয়া
•    রাগ, তিক্ততা বা শত্রুতা মনের ভিতরে পুষে রাখা দীর্ঘদিন
•    রাগ হলেই মদ্যপান, মাদক বা অন্য কোনও নেশায় ডুবে যাওয়া
•    বাড়ি, অফিস বা সম্পর্কের স্ট্রেস সামলাতে না পারা এবং রাগে ফেটে পড়া যখনতখন
•    রাগ হলেই হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া, চোয়াল বা কাঁধের পেশি শক্ত হয়ে ওঠা, মাথা ব্যথা, ঘাম, মাথা ঝিমঝিম বা হজমের গোলমাল
•    রাগের জেরে সম্পর্কে নিয়মিত অশান্তি, ঝগড়াঝাঁটি, একের পর এক সম্পর্ক ভাঙা, 
•    সহকর্মীদের সঙ্গে অশান্তি, অফিসে কাজের ক্ষতি 
•    বদরাগী স্বভাবের কারণে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী বা সমাজের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে একলা হয়ে পড়া
•    কারও উপরে অহেতুক রাগ, অশান্তি, কাউকে মানসিক বা শারীরিক আঘাত করার পর বিচলিত না হওয়া বা অপরাধবোধে না ভোগা
•    নিজের রাগ অন্যের উপর কতটা মানসিক প্রভাব ফেলছে না বোঝা
•    যে কোনও সমস্যার ক্ষেত্রে নিজের দায় স্বীকার না করে পুরো দোষটাই অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া
•    অন্যের অনুভূতির কথা না ভেবে বা নিজেরই কোনও দোষ আছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা না করে ক্রমাগত বা নিয়মিত রাগের বহিঃপ্রকাশ
•    রাগের বশে নানা সমস্যা বাধিয়ে আইনি জটিলতার মুখোমুখি হওয়া

চিকিৎসার পথ

রাগের বশে যদি অন্যের শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করতে থাকেন, জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন কিংবা নিজেই অসুস্থ পড়েন, একের পর এক সম্পর্ক ভাঙা বা পেশাগত কাজে অসুবিধে তৈরি হতে থাকে, অথবা আইনি সমস্যায় পড়তে থাকেন মাঝে মাঝেই, তবে আপনি কিন্তু বিপদসীমায় পৌঁছে গিয়েছেন। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা জরুরি। দেরি না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনোবিদদের কাছে বিভিন্ন রকম কাউন্সেলিং, থেরাপি কিংবা সমস্যা অনেকখানি বেড়ে গিয়ে থাকলে মনোচিকিৎসকের দেওয়া ওষুধপত্র খাওয়া আপনাকে সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে।

উপসর্গ চিনে সতর্কতা

উপরের কিছু উপসর্গ রয়েছে আপনার। তবে তা মাত্রাছাড়া নয় এখনও। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে নিজেই কিছু অভ্যাস তৈরি করে মনকে শান্ত করতে পারেন। 
যা করবেন:

•    কী কী কারণে বা পরিস্থিতিতে রাগ হচ্ছে, সেগুলো নিজে বোঝার বা চেনার চেষ্টা করুন। সেই সময়গুলোতে শান্ত থাকার বা সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন। 
•    মন শান্ত করতে, স্থিরতা আনতে যোগাসন, মেডিটেশন, ডিপ ব্রিদিং কার্যকরী হতে পারে। 
•    নিয়মিত যে কোনও ধরনের শারীরিক কসরত, হাঁটার অভ্যাস উপকারী হতে পারে। 
•    পছন্দসই হবি বেছে নিয়ে তাতে মনোযোগ দিন। বই পড়া, লেখালেখি, ছবি আঁকা, হাল্কা মেজাজের সিনেমা-সিরিজ দেখায় সুফল মিলতে পারে।
•    মন খুলে কথা বলা অভ্যাস করুন। কোনও কিছু খারাপ লাগলে, রাগ হলে, তা পুষে না রেখে বা অশান্তি না করে সবটা খুলে বলুন অন্যদের। 
•    মন শান্ত রাখা, রাগ নিয়ন্ত্রণ বা মন খুলে কথা বলা শেখাতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ বা ওয়ার্কশপ হয়। তাতে যোগ দিতে পারেন।  
রাগ বশে থাকলে ভাল থাকবেন আপনিই। সঙ্গে ভাল থাকবেন আপনার বৃত্তে থাকা মানুষগুলোও। সেটা ভাল নয় কি?