জগতের নানা বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের চর্চা চলছে। বিস্ময়কর গবেষণার ফলাফল দেখে চর্চার শেষ নেই। তেমনই নতুন এক গবেষণা বলছে, দিনের শুরুতে আপনার মূত্র শুধু দেহের জলশূন্যতার সংকেতই নয়, একইসঙ্গে মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের মাত্রাও প্রকাশ করতে পারে। অর্থাৎ সকালের মূত্র পরীক্ষা করেই বোঝা যেতে পারে, আপনার শরীর ঠিক কতটা মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শরীরে জলের ঘাটতি থাকলে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল-এর মাত্রা বেড়ে যায়। কর্টিসল-ই আমাদের শরীরের প্রধান স্ট্রেস নিয়ন্ত্রক। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দেখা গেছে, যাদের মূত্র গাঢ়, তাদের কর্টিসল প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক বেশি এবং তারা দ্রুত “অ্যাকিউট স্ট্রেস” বা আকস্মিক চাপের প্রতিক্রিয়া দেখায়।
আরও বিস্ময়কর বিষয় হল, এইসব অংশগ্রহণকারী নিজেরা কিন্তু অতিরিক্ত তৃষ্ণার কথা জানাননি। অর্থাৎ দেহে জলশূন্যতা থাকলেও তাঁরা তা অনুভব করতে পারেননি। এর ফলে বোঝা যায়, জলের ঘাটতি অজান্তেই শরীরের ভেতর চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন, যখন শরীরে জলের অভাব হয়, তখন ভ্যাসোপ্রেসিন নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন কিডনিকে জল ধরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু একইসঙ্গে এটি শরীরের স্ট্রেস সিস্টেমও সক্রিয় করে ফেলে। ফলে দেহ অনিচ্ছাকৃতভাবেই চাপের প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চাপ, ক্লান্তি, মাথা ভারী লাগা বা মনোযোগ কমে যাওয়ার মতো সমস্যার পেছনে অনেক সময় জলশূন্যতা দায়ী হতে পারে। সকালের মূত্রের গাঢ় রঙ-ই এক্ষেত্রে এক ধরনের প্রাথমিক সতর্ক সংকেত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত জল পান করলে শুধু শরীর হাইড্রেটেড থাকে না, স্ট্রেস হরমোনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে রক্তচাপ স্থিতিশীল হয়, মন ভাল থাকে এবং কাজের দক্ষতাও বাড়ে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে জল পান করা উচিত, বিশেষত ব্যস্ত সময় বা মানসিক চাপের মধ্যে জলপানের গুরুত্ব রয়েছে ।
দেহের ছোট্ট সংকেতগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা যে আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছে গবেষণা। সকালে মূত্রের দিকে নজর রাখাই হতে পারে মানসিক চাপ মাপার সহজতম উপায়। আর পর্যাপ্ত পানি জল করা-এই সহজ অভ্যাসই পারে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার মূল চাবিকাঠি হতে।
