আজকাল ওয়েবডেস্ক: কখনও কখনও বাস্তবের ঘটনা হার মানায় কল্পবিজ্ঞানকেও। ঘটে যায় এমন এমন বিষয় যার প্রমাণ না থাকলে হয়তো বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন হয়ে যেত। অস্ট্রিয়ার অ্যাডাম রেনিয়ারের কাহিনি কিছুটা তেমনই। তিনিই মানব সভ্যতার ইতিহাসে একমাত্র মানুষ যিনি জীবনের একটা সময় বামন ছিলেন, আবার এক সময় হয়ে উঠেছিলেন মারাত্মক লম্বা।
আরও পড়ুন: প্রকাণ্ড করতে গিয়েছিলেন লিঙ্গ, ফস করে পুরোটাই কেটে ফেললেন চিকিৎসক! মাথায় হাত রোগীর
১৮৯৯ সালে অস্ট্রিয়ার গ্রাজ অঞ্চলে জন্ম হয় রেনিয়ারের। তাঁর মেডিক্যাল রেকর্ড অনুসারে শৈশবে অত্যন্ত রোগা পাতলা এবং দুর্বল ছিলেন তিনি। ১৯১৭ সালে যখন তাঁর বয়স সবে ১৮, তখন তাঁর উচ্চতা ছিল মাত্র ৪ ফুট। সেকারণে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে পারেননি তিনি। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই অবস্থাটিকে বামনত্ব বা ‘ডোয়ার্ফিজম’ বলা হয়। সাধারণ ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক যে কোনও পুরুষের উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চির কম হলেই তাঁকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডোয়ার্ফিজমে আক্রান্ত বলে গণ্য করা হয়।
কিন্তু কয়েক বছর পরেই হঠাৎ করে বদলে যায় পরিস্থিতি। আচমকা লম্বা হতে শুরু করেন রেনিয়ার। ২০ থেকে ৩০ বছরের মাঝে গড়ে বছরে প্রায় ৩.১৬ ইঞ্চি করে লম্বা হতে থাকেন রেনিয়ার। ১৯৩২ সালে ৩৩ বছর বয়সে গিয়ে তাঁর উচ্চতা দাঁড়ায় ৭ ফুট ২ ইঞ্চিতে। বিষয়টি এতই অদ্ভুত যে ঘটনাটি দু’জন চিকিৎসকের নজরে আসে। ১৯৩০ এবং ১৯৩১ সালে দুজন চিকিৎসক পরীক্ষা করেন রেনিয়ারকে। পরীক্ষায় দেখা যায় পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার হয়েছে রেনিয়ার-এর। প্রসঙ্গত এই গ্রন্থটির থেকেই দেহের বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিভিন্ন হরমোন ক্ষরিত হয়। টিউমারের ফলে সেই গ্রন্থি থেকে প্রবল হারে নির্গত হচ্ছিল গ্রোথ হরমোন। আর তাতেই ক্রমশ লম্বা হচ্ছিলেন রেনিয়ার। বিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থা থেকে বলা হয় ‘জায়গান্টিজম।
আরও পড়ুন: প্রকাণ্ড করতে গিয়েছিলেন লিঙ্গ, ফস করে পুরোটাই কেটে ফেললেন চিকিৎসক! মাথায় হাত রোগীর
বিজ্ঞানের ভাষায় এই টিউমারটির নাম পিটুইটারি অ্যাডিনোমা। বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসক অস্কার হার্স অস্ত্রোপচারের করেন। পিটুইটারি গ্রন্থির অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদান এই চিকিৎসকের। সেই তিনিই জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমারটি বার করে নেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ততদিনে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। দেহের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ততদিনে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মারাত্মক দুর্বল হয়ে গিয়েছে রেনিয়ারের। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে হাঁটা চলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছিলেন রেনিয়ার। অস্ত্রোপচারের পর বৃদ্ধাবাসে থাকতে শুরু করেন রেনিয়ার। সেখানে ১৯৫০ সালে ৫১ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর। মারা যাওয়ার সময় তাঁর উচ্চতা ছিল ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি।
আরও পড়ুন: প্রকাণ্ড করতে গিয়েছিলেন লিঙ্গ, ফস করে পুরোটাই কেটে ফেললেন চিকিৎসক! মাথায় হাত রোগীর
চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে একই ব্যক্তির দেহে এমন দ্বৈত অবস্থার উল্লেখ আর কখনও পাওয়া যায়নি। এখনও পর্যন্ত অ্যাডাম রেনিয়ার একমাত্র মানুষ যিনি নিজের জীবনকালে ‘ডোয়ার্ফিজম’ এবং ‘জায়গান্টিজম’ দুই ধরনের রোগেই আক্রান্ত হয়েছেন।
