ফুসফুসের রোগে আক্রান্তদের জন্য এক চমকপ্রদ সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মানবদেহে শ্বাস নেওয়ার একেবারে নতুন ও অবিশ্বাস্য সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক। তাঁরা এমন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যেখানে ফুসফুস কাজ না করলেও শরীর অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারবে অন্ত্র বা পায়ুপথের মাধ্যমে! এই অভিনব চিকিৎসা-প্রযুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে 'এন্টারাল ভেন্টিলেশন' যা জনপ্রিয়ভাবে পরিচিত হচ্ছে “বাট ব্রিদিং” নামে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রকৃতিতে এমন বহু প্রাণী আছে যারা ফুসফুস ছাড়াই শ্বাস নিতে পারে। যেমন কিছু মাছ, কচ্ছপ এবং উভচর প্রাণী জলের নিচে থাকার সময় তাদের অন্ত্র বা ত্বকের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই জীববৈজ্ঞানিক কৌশল থেকেই বিজ্ঞানীরা অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়া প্রয়োগের চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুনঃ ৫৩-র মহিলা ফিরলেন ২৩-এর যৌবনে, সাফল্য বিজ্ঞানের! কীভাবে হল অসাধ্য সাধন?
জাপানের কিওটো বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের টোকিও মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রথম দফার মানব-পরীক্ষা চালানো হয়। সেখানে ২৭ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবক পুরুষ অংশ নেন। গবেষকরা তাদের পায়ুদ্বারের মাধ্যমে অক্সিজেনবাহী এক বিশেষ তরল প্রয়োগ করেন, যা অন্ত্রের দেওয়াল দিয়ে রক্তপ্রবাহে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সক্ষম।
অংশগ্রহণকারীরা গড়ে এক ঘণ্টা পর্যন্ত এই তরল শরীরে ধরে রাখতে সক্ষম হন। পরীক্ষার সময় কয়েকজনের হালকা ফোলাভাব, গ্যাস বা অস্বস্তি দেখা দিলেও কারও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। গবেষকরা জানান, এটি প্রমাণ করে যে পদ্ধতিটি মানবদেহে সহনীয় ও আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ।
“বাট ব্রিদিং” প্রযুক্তি মূলত বিকল্প অক্সিজেন সরবরাহের উপায় হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে যেসব রোগীর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে গেছে বা যারা ভেন্টিলেটরের ওপর নির্ভরশীল তাদের জন্য কার্যকরী। এই পদ্ধতিতে তরল আকারে অক্সিজেন সরাসরি অন্ত্রে পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে তা রক্তে মিশে শরীরের কোষে পৌঁছায় যেমনটা সাধারণত ফুসফুসের মাধ্যমে ঘটে।

গবেষকরা মনে করেন, এটি কার্যকর প্রমাণিত হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে এক বিপ্লবী প্রযুক্তি হতে পারে। ফুসফুসের রোগ, কোভিড-১৯-এর পরবর্তী জটিলতা কিংবা হঠাৎ শ্বাসরোধজনিত পরিস্থিতিতে এই পদ্ধতি জীবনরক্ষায় সহায়তা করতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এখনই এটি চিকিৎসায় প্রয়োগযোগ্য নয়। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র নিরাপত্তার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, কার্যকারিতা প্রমাণ বাকি। গবেষণার পরবর্তী ধাপে প্রাণী-পরীক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি মানব-পরীক্ষা চলবে, যাতে বোঝা যাবে কতটা অক্সিজেন অন্ত্রের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করতে পারে এবং তা ফুসফুসের বিকল্প হিসেবে কতটা কার্যকর।
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, 'এন্টারাল ভেন্টিলেশন' সফলভাবে প্রমাণিত হলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন হয়ে উঠবে। হয়তো ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসবে, যখন ফুসফুস কাজ না করলেও মানুষ বিকল্প পথে অক্সিজেন পেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।
