আজকাল জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির রমারমা। এবার নাকি বদলে যেতে চলেছে মানুষের জন্মের ধারণাও। মাতৃগর্ভে নয়, আগামী দশকে মানুষের জন্ম সম্পূর্ণ ল্যাবরেটরিতে সম্ভব হবে! কৃত্রিম গর্ভ ও উন্নত স্টেম সেল প্রযুক্তির সাহায্যে মা-বাবার উপস্থিতি ছাড়া সম্পূর্ণ কাস্টমাইজড ডিএনএ-তে তৈরি হতে পারে শিশু। সাম্প্রতিক সময়ে সমাজ মাধ্যম ও কিছু অনলাইন রিপোর্টে এমনই চমকপ্রদ দাবি করা হয়েছে। আর এই খবরে অনেকেরই মনে প্রশ্ন জেগেছে, এ কি আদৌ সম্ভব? নাকি কেবল ভবিষ্যতের কল্পনা?
বিজ্ঞান বলছে, এই দাবি এখনও পুরোপুরি সত্য নয়। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতি ভবিষ্যতের জন্য কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা গত কয়েক বছরে কৃত্রিম গর্ভ প্রযুক্তিতে বড় সাফল্য পেয়েছেন। ইজরায়েল, জাপান ও আমেরিকার বিভিন্ন গবেষণাগারে ভেড়া ও ইঁদুরের ভ্রূণকে প্লাস্টিকের থলির মতো যন্ত্রে কৃত্রিম তরলের মধ্যে রেখে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ভ্রূণটি মাতৃগর্ভ ছাড়াই বিকশিত হয়েছে। তবে মানুষের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি এখনও পুরোপুরি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে, স্টেম সেল প্রযুক্তিতেও দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা প্রাণীর দেহকোষ থেকে কৃত্রিম শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরি করতে পেরেছেন। তাই ভবিষ্যতে হয়েতো কোনও দম্পতি ছাড়াই ল্যাবরেটরিতে ভ্রূণ তৈরি সম্ভব হতে পারে! কিন্তু বাস্তবে এখনও মানুষের ক্ষেত্রে তা অনুমোদিত নয়।
২০১৮ সালে চীনের বিজ্ঞানী হে জিয়ানকুই দুটি শিশুর জিন সম্পাদনা করেছিলেন, যাতে তারা জন্ম থেকেই এইআইভি প্রতিরোধী হয়।ঘটনাটিকে ঘিরে বিজ্ঞানজগতে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ওই বিজ্ঞানীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং বিশ্বজুড়ে মানব ভ্রূণের জিন সম্পাদনা আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, জিন সম্পাদনা মানবজাতির ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে, কিন্তু তার নৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি ভয়াবহ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, কৃত্রিম গর্ভ ও জিন সম্পাদনার মতো প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও নীতি তৈরি জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে সামাজিক বৈষম্য, জেনেটিক বৈষম্য এবং ‘ডিজাইনার বেবি’ সংস্কৃতি তৈরি হতে পারে যা সমাজে গভীর প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে এমন কোনও প্রযুক্তি নেই যা মানুষের ভ্রূণকে সম্পূর্ণ কৃত্রিম গর্ভে বড় করতে পারে। আগামী দশ বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য হবে, এমন প্রমাণও এখনও নেই। তাই বিজ্ঞানীদের মতে, ‘ল্যাবে তৈরি শিশু’ এখনও বিজ্ঞান কল্পকাহিনির কাছাকাছি রয়েছে। যদিও ভবিষ্যতে সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না। একথা ঠিক যে মানবজাতির প্রজননের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি অভাবনীয় দ্রুততায় এগোচ্ছে। তবে নৈতিক অনুমোদন ছাড়া এটি বাস্তবে প্রয়োগ বিপজ্জনক।
