আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহর জুড়ে আলোর রোশনাই, কালীপুজো আর দীপাবলির উন্মাদনা। কিন্তু এই উৎসবের আবহের সঙ্গেই ফিরে আসে এক তীব্র আতঙ্ক। না, এ আতঙ্ক মানুষের নয়, আমাদের বাড়ির চারপেয়ে সদস্যদের, বিশেষত কুকুরদের। প্রতি বছর বাজি পটকার তীব্র শব্দে দিশেহারা হয়ে পড়ে অবলা প্রাণীগুলি। হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অনবরত ভয়ে কাঁপা, খাটের তলায় বা ঘরের কোণে লুকিয়ে পড়া- যাঁরা কুকুর পোষেন তাঁরা সারমেয় সঙ্গীটির এহেন আচরণের সঙ্গে পরিচিত। তাই উৎসবের আনন্দ যাতে ওদের কাছে বিভীষিকা হয়ে না ওঠে, তার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুন: বাতের ব্যথা সারাতে বাঘের মূত্র পান করছে চিনারা! প্রতিবেশী দেশের কাণ্ডে ছিছিক্কার বিশ্বজুড়ে

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কুকুরদের শ্রবণশক্তি মানুষের চেয়ে বহুগুণ বেশি প্রখর। যে শব্দ আমাদের কানে সহনীয়, সেই শব্দই ওদের শ্রবণেন্দ্রিয়তে ভয়ঙ্কর আঘাত হানে। বাজি পটকার আকস্মিক এবং তীব্র শব্দে ওরা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে যে অনেক সময়েই স্নায়বিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। পালানোর চেষ্টায় ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়া বা রাস্তাঘাটে বেরিয়ে গাড়ির তলায় চাপা পড়ার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটে।

এই অবস্থায় কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন আপনার পোষ্যকে?

পশু চিকিৎসক এবং প্রাণী বিশেষজ্ঞরা এই সময়ে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিচ্ছেন।

১। একটি নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করুন: বাড়ির এমন একটি ঘর বা কোণ বেছে নিন যেখানে বাইরের শব্দ তুলনামূলকভাবে কম পৌঁছায়। সেই জায়গায় পোষ্যের প্রিয় কম্বল, নরম বিছানা এবং খেলার জিনিসপত্র রেখে দিন। এটি ওদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করবে।

২। শব্দ থেকে আড়াল: বাজি ফাটানো শুরু হওয়ার আগেই বাড়ির সমস্ত দরজা জানলা ভাল করে বন্ধ করে দিন। সম্ভব হলে ভারী পর্দা টেনে দিন। এতে শব্দ এবং আলোর ঝলকানি, দু’টোই কিছুটা কমবে। অল্প শব্দে মৃদু সঙ্গীত বা টেলিভিশনের শব্দ চালিয়ে রাখলে বাইরের আওয়াজ থেকে ওদের মন অন্যদিকে চালিত হতে পারে।

৩। পাশে থাকুন, শান্ত থাকুন: আপনার পোষ্য যখন ভয় পায়, তখন সে আপনার সান্নিধ্য চায়। ওকে একা ছেড়ে দেবেন না। তবে অতিরিক্ত আদিখ্যেতা বা ভয় পাওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েও ওকে আরও আতঙ্কিত করে তুলবেন না। আপনি শান্ত থাকলে পোষ্য ভরসা পাবে। আপনার স্বাভাবিক আচরণই ওর কাছে সবচেয়ে বড় আশ্বাস।

৪। কখনও বেঁধে রাখবেন না: আতঙ্কের মুহূর্তে কুকুর ছোটাছুটি করতে চায়। এই সময়ে গলায় শিকল দিয়ে বা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক হতে পারে। ভয়ে ছটফট করতে গিয়ে গলায় ফাঁস লেগে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

৫। মনোযোগ ঘোরানোর চেষ্টা: যখন বাইরে তারস্বরে বাজি ফাটছে, তখন পোষ্যকে প্রিয় কোনও খেলা বা নতুন কোনও খেলনা দিয়ে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। এমন খেলনা দিন যা দিয়ে পোষ্য অনেকক্ষণ ব্যস্ত থাকতে পারে। চিবানোর জন্য হাড় জাতীয় কিছু দিলে ওর মনোযোগ সেদিকেই থাকবে।

৬। পশু চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি আগে দেখে থাকেন যে আপনার পোষ্য বাজির শব্দে খুব বেশি কষ্ট পায়, তবে আগে থেকেই কোনও পশু চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে রাখুন। তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী উদ্বেগ কমানোর জন্য নিরাপদ ওষুধ বা থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন। মনে রাখবেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও শান্ত করার ওষুধ বা ঘুমের ওষুধ দেওয়া চলবে না।

উৎসব মানে সকলের আনন্দ। আমাদের একটু সংবেদনশীলতা এবং সতর্কতা এই অবলা জীবগুলির জীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। এ বারের দীপাবলি হোক আলোকময়, সকলের জন্য নিরাপদ।