স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য বা ওজন কমানোর জন্য নতুন কিছু চেষ্টা করতে চাইলেই, অনেক সময় আমরা অদ্ভুত ডায়েট ট্রেন্ডের দিকে আকৃষ্ট হই। এর মধ্যে একটিই হল শুধুমাত্র ফল খাওয়া বা ফ্রুট অনলি ডায়েট। সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই এই দাবি দেখা যায় যে, ফল খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়, শরীর হালকা লাগে এবং ওজন দ্রুত কমে। কিন্তু কি এটি সত্যিই সম্ভব? শুধুমাত্র ফল খেয়ে কি আমরা বেঁচে থাকতে পারি, এবং যদি পারি, তাহলে এর ক্ষতিকর প্রভাব কি হতে পারে? সবটা বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমেই জানা জরুরি, ফল ভিত্তিক ডায়েট কী। এই ডায়েটে মানুষ তাদের খাবার প্রায় সম্পূর্ণভাবে ফল পর্যন্ত সীমিত রাখে। কেউ কেউ সামান্য বাদাম বা বীজ অন্তর্ভুক্ত করেন, কিন্তু প্রধান খাবার ফলই থাকে। ফলের মধ্যে থাকে জল, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন, যা স্বাস্থ্যবান জন্য উপকারী। কিন্তু শুধুমাত্র ফলের উপর নির্ভর করলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের অভাব হতে পারে।
আমরা যখন শুধুমাত্র ফল খাই, তখন সবচেয়ে প্রথম সমস্যা হয় প্রোটিনের অভাব। আমাদের শরীরের পেশী মেরামত, কোষ এবং টিস্যু গঠনের জন্য প্রোটিন প্রয়োজন। এই অভাব পূরণ না হলে দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং পেশীর ক্ষয় হতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন বি ১২, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবের ঝুঁকি বাড়ে। এই সব উপাদান হাড়, রক্ত, মস্তিষ্ক এবং হৃদয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটি বড় সমস্যা হল মেটাবলিজম এবং রক্তে শর্করার পরিবর্তন। ফলের মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি বা ফ্রুক্টোজ থাকে। যদি শুধুমাত্র ফল খাওয়া হয়, তাহলে এই চিনি হঠাৎ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রক্তে শর্করা ওঠানামা করতে পারে। যারা ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন প্রতিরোধের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে। পাশাপাশি, প্রোটিন এবং ফ্যাটের অভাব মেটাবলিজমকে ধীর করে দেয়, ফলে শুরুতে ওজন কমানোর আকাঙ্ক্ষা প্রভাবিত হতে পারে।
 
 
 পাচনতন্ত্রেও এর গভীর প্রভাব পড়ে। ফলের মধ্যে ফাইবার থাকে, যা হজমে সহায়ক, কিন্তু যদি আমরা শুধুমাত্র জুস বা হাতে গোনা কিছু ফলের উপর নির্ভর করি, তাহলে অন্ত্রে থাকা ভাল ব্যাকটেরিয়ার উপর প্রভাব পড়তে পারে। ফলস্বরূপ পেট ফোলা, গ্যাস বা হজমজনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
 
 
 মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে দেখা যায়, খুব সীমিত, কড়া এবং দীর্ঘ সময় ধরে শুধুমাত্র ফল খাওয়া মানসিক চাপ, খাওয়ার প্রতি অনিয়ন্ত্রিত অভ্যাস এবং সামাজিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। মানুষ খাবারের চিন্তায় উদ্বিগ্ন থাকে, আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং সামাজিক মেলামেশাও কঠিন হয়ে পড়ে।
সুষম ডায়েটে ফল অন্তর্ভুক্ত করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার এবং প্রদাহের ঝুঁকি কমে। ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল আমাদের শরীরকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফাইবার আমাদের পেট ভরা অনুভব করায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়।
