শীতকালে ত্বক স্বাভাবিকভাবেই শুষ্ক হয়ে যায়। এই সময় ত্বক খসখসে লাগে, টানটান ভাব হয়, কখনও চুলকানি বা খোসা ওঠার সমস্যাও দেখা দেয়। অনেকেই লক্ষ্য করেন ত্বকের ঔজ্জ্বল্য কমে যাচ্ছে, টেক্সচার অসমান হয়ে পড়ছে বা কিছু জায়গা বেশি সংবেদনশীল ও জ্বালাপোড়াযুক্ত মনে হচ্ছে। তবে এই সমস্যা শুধু ত্বকের উপরিভাগে সীমাবদ্ধ নয়। তাই কেবল বাইরের স্কিন কেয়ারই যথেষ্ট নয়, ভিতর থেকেও যত্ন নেওয়া জরুরি।
সঠিক খাবারের মাধ্যমে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখলে তার প্রভাব ত্বকের উপরও পড়ে। ত্বক হয়ে ওঠে স্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল ও সুস্থ।
ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট মোক্ষা মেহতা জানান, ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিশেষভাবে ‘গাট-স্কিন কানেকশন’-এর কথা উল্লেখ করেন। বলেন, অন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হলে ত্বকের শুষ্কতা, প্রদাহ-সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কেন শীতকালে ত্বক বেশি শুষ্ক হয়?
শীতের ঠান্ডা বাতাস এবং কম আর্দ্রতাকে সাধারণত ত্বক শুষ্ক হওয়ার প্রধান কারণ হিসাবে ধরা হয়। তবে মোক্ষার মতে, আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ অনেক সময় নজর এড়িয়ে যায়। অন্ত্র ও ত্বকের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমাদের অন্ত্রে কোটি কোটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা হজম, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।”
যখন ভুল খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত জল না খাওয়া বা মানসিক চাপের কারণে অন্ত্রের এই ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন শরীরে প্রদাহ বাড়ে। তার প্রভাব ত্বকে শুষ্কতা, লালচে ভাব, ব্রণ বা একজিমার মতো সমস্যার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শীতকালে ফাইবার কম এবং প্রসেসড খাবার বেশি খাওয়ার প্রবণতা এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ত্বক ভাল রাখতে খাদ্যাভ্যাস কেন জরুরি?
শীতকালে ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে হলে এমন খাবার খেতে হবে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। অন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করলে তার সুফল ত্বকেও পৌঁছয়। ময়েশ্চারাইজার বা লোশনের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসও শুষ্কতা দূর করতে বড় ভূমিকা নেয়।
ডায়েটিশিয়ান মোক্ষা মেহতা প্রোবায়োটিক, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং পর্যাপ্ত জল গ্রহণের উপর জোর দেন। তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, তাদের উৎস ও উপকারিতা তুলে ধরেছেন—
প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার
উৎস: দই, ঘোল, ফারমেন্টেড সবজি, কেফির
উপকারিতা: এতে থাকা ভাল ব্যাকটেরিয়া প্রদাহ কমায় এবং পুষ্টি শোষণ বাড়ায়, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ও মেরামতে সাহায্য করে।
প্রিবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার
উৎস: গোটা শস্য, রসুন, পেঁয়াজ, কলা ও মৌসুমি সবজি
উপকারিতা: এগুলি অন্ত্রের পরিবেশকে শক্তিশালী করে এবং ক্ষতিকর টক্সিনের কারণে ত্বকে প্রদাহ হওয়া আটকায়।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট
উৎস: আখরোট, তিসি বীজ, চিয়া সিড, তৈলাক্ত মাছ (ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড)
উপকারিতা: ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শুষ্কতা ও চুলকানি কমায়।
পর্যাপ্ত জলপান
উৎস: জল, হার্বাল টি, স্যুপ
উপকারিতা: অন্ত্রের আস্তরণ সুস্থ রাখে এবং ত্বককে ভিতর থেকে আর্দ্র রাখে।
ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
উৎস: লেবু জাতীয় ফল, বাদাম, বীজ, শাকসবজি
উপকারিতা: ভিটামিন সি, জিঙ্ক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে এবং ত্বকের ক্ষত সারাতে সহায়ক।
