দুর্বল হয়ে পড়া, বারবার মাথা ঘোরা বা অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়াকে অনেকেই তেমন গুরুত্ব দেন না। কিন্তু এগুলি শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। হিমোগ্লোবিন হল লোহিত রক্তকণিকায় থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন, যা শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, যার ফলে সারাক্ষণ ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয়।

হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া বা অ্যানিমিয়া আজ বিশ্বজুড়ে একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে নারী এবং কিশোরীদের মধ্যে। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, আয়রনের ঘাটতি এবং পুষ্টিকর খাবারের অভাবই এর প্রধান কারণ। অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকেরা আয়রন ট্যাবলেটের পরামর্শ দেন, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা দীর্ঘদিন ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা এড়াতে অনেকেই প্রাকৃতিক উপায় খুঁজছেন।

বিটরুট প্রকৃতির আয়রন বুস্টার

এই ক্ষেত্রে বিটরুট বা বিট একটি কার্যকর প্রাকৃতিক খাবার হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বিটরুটে রয়েছে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার ও একাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন, যা লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণ আরও সহজ করে তোলে। এই কারণে বিটরুটকে প্রাকৃতিক ‘অক্সিজেন বুস্টার’ বলেও মনে করা হয়।

গবেষণায় কী বলছে বিটরুট নিয়ে

বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বিটরুটের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। ২০২১ সালেঅ্যাক্সেস ম্যাকেডোনিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস -এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, অ্যানিমিয়ায় ভোগা কিশোরীরা টানা দু’সপ্তাহ প্রতিদিন বিটরুটের রস খেলে তাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। গড় হিমোগ্লোবিন বেড়ে ১১.৪৭ গ্রাম/ডিএল থেকে ১২.০২ গ্রাম/ডিএল-এ পৌঁছয়।

কীভাবে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় বিটরুট রাখবেন

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন এক গ্লাস তাজা বিটরুটের রস পান করা বা স্যালাডে কাঁচা বিটরুট যোগ করা উপকারী। স্মুদি বানিয়েও এটি খাওয়া যায়, আবার হালকা সেদ্ধ করলেও পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। আয়রন শোষণ বাড়াতে লেবু, কমলা বা আমলকির মতো ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে বিটরুট খাওয়া ভাল।

স্বাস্থ্য ফেরানোর সহজ ও প্রাকৃতিক উপায়

বিটরুট এখন লো হিমোগ্লোবিন মোকাবিলার সহজ এবং সাশ্রয়ী সমাধান হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হালকা অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে নিয়মিত বিটরুট খেলে শক্তি ফিরে আসতে পারে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব।

শরীরের ছোটখাটো উপসর্গকে অবহেলা না করে সময়মতো সচেতন হওয়াই সুস্থ থাকার প্রথম শর্ত। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর এবং প্রাকৃতিক উপাদানকে গুরুত্ব দিলে ধীরে ধীরে শরীর নিজেই ঘাটতি সামলাতে শেখে। ওষুধের পাশাপাশি সঠিক খাবার, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম মিলেই দীর্ঘমেয়াদে সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব। তাই বড় সমস্যার আগে সতর্ক হওয়া এবং অভ্যাসে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার দিকেই মন দেওয়া উচিত।