আজকাল ওয়েবডেস্ক:  রাজ্যে ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। এই প্রক্রিয়াকে ঘিরে কখনও শাসকদলের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, আবার কখনও রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির তরফ থেকেও অভিযোগ উঠছে খসড়া তালিকায় নাম বাদ যাওয়া নিয়ে। বলাবাহুল্য, বিগত প্রায় ২০–২৫ দিন ধরে বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটির আন্দোলন চলছে, তাদের উপর অন্যায়ভাবে চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ তুলে। আবার খসড়া তালিকা প্রকাশের পর থেকেই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একযোগে অভিযোগ তুলেছেন যোগ্য ভোটারদের নাম বাদ যাওয়ার বিষয়ে।

এবার একই অভিযোগ তুললেন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তাঁর অভিযোগ, খসড়া তালিকা থেকে তাঁর এলাকায় এক লক্ষেরও বেশি মতুয়া ভোটারের নাম বাদ গেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।

অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন শুনানি পর্বের জন্য বজ্র আঁটুনি সমান সতর্কতার ব্যবস্থা নিচ্ছে।  শুনানি পর্বে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

শুনানি পর্বে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন রাজ্যে কয়েক হাজার মাইক্রো অবজারভার নিয়োগ করছে। যাঁদের নিয়োগ করা হচ্ছে, তাঁরা রাজ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কর্মরত। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তর জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৪৬০০ জনকে এই পদে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩৩০০ জন মাইক্রো অবজারভারকে সরাসরি শুনানি পর্বের জন্য কাজে লাগানো হবে, বাকিদের সংরক্ষিত রাখা হচ্ছে। তবে প্রয়োজনে ১০ হাজার বা তারও বেশি মাইক্রো অবজারভার নিয়োগ হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মাইক্রো অবজারভার পদে নিয়োগ ঘিরেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরে তৈরি হয়েছে চাপানউতোর। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত অনলাইনে প্রায় এক হাজারের বেশি ইস্তফাপত্র জমা পড়েছে মাইক্রো অবজারভার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে। পাশাপাশি, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরে সরাসরি এসে একশোরও বেশি ইস্তফাপত্র জমা পড়েছে।

আজ সকাল থেকেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল-সহ একাধিক নির্বাচনী আধিকারিকের উপস্থিতিতে মাইক্রো অবজারভারদের প্রশিক্ষণ পর্ব শুরু হয়। এই প্রশিক্ষণ পর্ব সম্পন্ন হয় কলকাতার নজরুল মঞ্চে। প্রশিক্ষণ শেষ হতেই শুরু হয় অব্যাহতির আবেদন জমা দেওয়ার পর্ব। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত অনলাইনে এই পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ১০০০-রও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। একই সঙ্গে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরে উপস্থিত থেকে ১০০-রও বেশি ইস্তফাপত্র জমা পড়েছে, যা নির্বাচন কমিশনের কাছে যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত মাইক্রো অবজারভারদের অবশ্যই নিযুক্ত পদে কাজ করতে হবে। সাধারণত কোনওভাবেই অব্যাহতি চাওয়া যায় না। জরুরি পরিস্থিতিতে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা যেতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা যদি মনে করে, তবে বিশেষ বিবেচনায় অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। অন্যথায় নির্বাচন কমিশনের এই নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি পাওয়া সম্ভব নয়।

নজরুল মঞ্চে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরই একের পর এক ইস্তফা জমা দিতে শুরু করেন বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আধিকারিকরা। তাঁদের আবেদনে কেউ পরিবারের সদস্যের অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন, আবার কেউ বলেছেন যে নিযুক্ত কর্মস্থলের দূরত্ব অত্যন্ত বেশি।

অব্যাহতি চেয়ে জমা পড়া আবেদনের তালিকাও কম বড় নয়। কেউ নতুন বিবাহের কারণে হানিমুন বা মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার অজুহাতে অব্যাহতি চাইছেন, আবার কেউ নিজের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে নিযুক্ত পদে কাজ না করার আবেদন জানিয়েছেন। যদিও এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তর এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।

তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সমস্ত আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা হবে এবং যেসব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মাধ্যমে মাইক্রো অবজারভারদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। সেই আলোচনার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কারা অব্যাহতি পাবেন। যদি কাউকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, তবে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে তার পরিবর্তে যোগ্য আধিকারিকের রিপ্লেসমেন্ট দিতে হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে আরও জানা গেছে, অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা না হলে কোনওভাবেই এই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না। পুরো বিষয়টি নির্ধারিত হবে জমা দেওয়া আবেদনপত্র এবং তার সঙ্গে যুক্ত উপযুক্ত নথি ও তথ্যের ভিত্তিতে।