আজকাল ওয়েবডেস্ক: এ যেন বিস্ময়! অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে ভেবেছিলেন। কিন্তু হাসপাতালের পথে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরেই যখন এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন, তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন এক ব্রিটিশ যুবতী। সঙ্গে উপস্থিত চিকিৎসকরাও৷
"আমি নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। এ কী ঘটে গেল, তা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না", সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন নতুন মা, ২৬ বছরের মেগান ইশারউড। তাঁর কথায়, "আমার পেটে কোনও স্ফীতি ছিল না, গর্ভাবস্থার কোনও উপসর্গও ছিল না। ও যেন একেবারে আকাশ থেকে পড়ল।"
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি গত ৯ সেপ্টেম্বরের। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেগান পেটের ডান দিকে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় রক্তবমি। অবস্থা গুরুতর বুঝতে পেরে তিনি অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য ফোন করেন। চিকিৎসাকর্মীরা এসে মেগানের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন। দেহের ডান দিকে ব্যথা, হৃদস্পন্দন বেশি থাকা এবং বমি বমি ভাবের মতো উপসর্গ দেখে তাঁরা প্রাথমিকভাবে এটিকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলেই মনে করেন।
এরপর তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। চিকিৎসকেরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎই তাঁর শরীর থেকে গলগল করে রক্ত বেরোতে শুরু করে, বিছানা ভেসে যায় রক্তে।
ব্ল্যাকবার্নের বাসিন্দা মেগান এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, "প্রায় ১৫ জন ডাক্তার আমাকে ঘিরে ধরেছিলেন। কী হয়েছে বোঝার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার জন্য সিটি স্ক্যান এবং আলট্রাসাউন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর তখনই তাঁরা একটি মাথা ও পায়ের সন্ধান পান। এর পরেই তাঁরা আমাকে দ্রুত বার্নলে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ সেখানে প্রসূতি বিভাগ রয়েছে।"
খবর অনুযায়ী, সেই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে পৌঁছনোর সময়টুকুও পাওয়া যায়নি। অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরেই সন্তানের জন্ম দেন মেগান। বেশ কয়েকজন চিকিৎসাকর্মী সেই সময়ে তাঁর পাশে ছিলেন। মেগান বলেন, "আমার শুধু মনে হচ্ছিল শরীরটাকে বাইরে ঠেলে দিই। পরক্ষণেই তাঁরা জানালেন, 'অভিনন্দন, আপনার ছেলে হয়েছে'। আমি এতটাই অবাক এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম যে, কী ঘটেছে তা বুঝতেই পারছিলাম না।"
কিন্তু মেগানের সেই বিস্ময় মুহূর্তে আতঙ্কে পরিণত হয়, যখন চিকিৎসকরা দেখেন যে সদ্যজাত শিশুটির শরীর নীল হয়ে গিয়েছে এবং সে শ্বাস নিচ্ছে না। তবে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই সৌভাগ্যবশত তাঁরা সময়ের আগে সদ্যজাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হন। মেগান তাঁর ছেলের নাম রেখেছেন জ্যাকসন।
এরপর মা এবং ছেলেকে নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে দুজনেরই সেপসিস ধরা পড়ে। তবে সৌভাগ্যবশত, তাঁরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। অবশেষে ২৫ সেপ্টেম্বর, মেগান তাঁর আকস্মিক ভাবে পাওয়া শিশুপুত্রকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
যুবতী জানিয়েছেন, সন্তানের বাবা এমন এক ব্যক্তি যার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। "কী ঘটে গেল, তা বুঝে উঠতেই আমার বেশ কিছুটা সময় লেগেছে," নিজের প্রাথমিক মানসিক অবস্থা বোঝাতে গিয়ে বলেন মেগান। "আমি মনে মনে ভাবছি, তুমি কোথা থেকে এলে?"
তবে এই আকস্মিক ধাক্কা সামলে মেগান দ্রুত মাতৃত্বকে আপন করে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ছেলে জ্যাকসনের প্রতি তাঁর ভালবাসা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। "ও আমার কাছে একটা আস্ত বিস্ময়। ও এখন একেবারে সুস্থ আছে," তিনি আরও বলেন।
