আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঠিক একদিন আগের ঘটনা। ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরেই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলেছি। চুক্তি অনুযায়ী সে দেশের বিশাল তৈলভান্ডারের উন্নতিতে পাকিস্তান এবং আমেরিকা যৌথভাবে কাজ করবে।‘ একইসঙ্গে তিনি লেখেন, হতেই পারে অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তান ভারতকে তেল বিক্রি করবে। যদিও কীভাবে সেই কাজ হবে তা স্পষ্ট নয় এখনও। বিশেষজ্ঞদের মতে, হতে পারে কোনও একটি আমেরিকান সংস্থাকে পাকিস্তানের অপরিশোধিত তেল উত্তোলনের জন্য খনন অধিকার দেওয়া হবে। 

তারপরেই, বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস রিভাইসড টারিফ বা পারস্পরিক শুল্কের তালিকা প্রকাশ করেছে। এপ্রিল মাসের পর, জুলাইয়ের শেষ দিন। ওই তালিকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছেন, বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমেরিকায় পণ্য আমদানির সময় কোন হারে শুল্ক বসবে সেইসব দ্রব্যের উপর। নয়া শুল্ক-নীতিতে ট্রাম্প ইতিমধ্যেই সাক্ষরও করে দিয়েছেন। 

আরও পড়ুন: ‘ছেলেকে ফেরত চাইলে পাঁচ লাখ দে’, ফ্যামিলি পার্কের সামনে পড়ে সাইকেল, ঝোপের ধারে নাবালকের ঝলসানো দেহ, কারণ খুঁজতে হিমশিম

লম্বা তালিকায় অবশ্যই নজর কেড়েছে পাকিস্তান। পারস্পারিক শুল্কের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, যেখানে ভারত থেকে আমেরিকায় রপ্তানি হয়া দ্রব্যের উপর শুল্কের হার ২৫ শতাংশ। সেখানে পাকিস্তান থেকে আমেরিকায় রপ্তানি হওয়া  দ্রব্যের উপর লাগু হতে চলছে ১৯ শতাংশ শুল্ক-নীতি। অর্থাৎ ভারত থেকে আমদানীকৃত দ্রব্যের তুলনায় পাক-আমদানীকৃত দ্রব্যের উপর অনেকটাই কম শুল্ক লাগু হচ্ছে। দুই দেশের তেল-চুক্তির পরেই এই শুল্ক শতাংশ প্রকাশ্যে এসেছে। একাংশ মজার ছলে বলছেন, দেশে ওষুধ-পোশাকের দাম বাড়ে বাড়ুক, পাকিস্তান যেহেতু ট্রাম্পকে নোবেল দেওয়ার সুপারিশ করেছে, তাই পাকিস্তানকে বিশেষ সুযোগ দিচ্ছেন ট্রাম্প। এক ধাক্কায় পাকিস্তানের আমদানির উপর শুল্ক ২৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে।

 
ট্রাম্প আগেই জানিয়েছিল, যেসব দেশের সঙ্গে মার্কিন মুলুকের বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে, সেসব দেশের উপর প্রয়োগ করবে চড়া শুল্ক হার। বন্ধু ভারতের উপরেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন মুলুক। এতে একাধিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে আমেরিকায়। আমেরিকায় ভারত থেকে কোন কোন দ্রব্য রপ্তানি হয়? রয়টার্সের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, স্মার্টফোন, অটোমোটিভ যন্ত্রাংশ, কাটা ও পালিশ করা হীরা, তৈরি পোশাক এবং ওষুধের ক্ষেত্রে ভারত মার্কিন মুলুকের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী। আমেরিকান সংস্থা এবং গ্রাহকরা এখন এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি কিনতে বেশি খরচের সম্মুখীন হবেন। অর্থাৎ ওই জিনিসগুলি কিনতে বেশি খরচ করতে হবে।

 

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ভারত স্মার্টফোনের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিককালে। অনেক মাঝারি মানের অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং এমনকি অ্যাপলের মতো মার্কিন ব্র্যান্ডের যন্ত্রাংশও ভারতেই তৈরি হয়। 
এই ধরনের আমদানির উপর ২৫% শুল্ক আরোপ মার্কিন মুলুকে স্বাভাবিকভাবেই খরচ বাড়াবে। ইয়েলের বাজেট ল্যাব এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস পূর্বাভাস দিয়েছে যে সম্পূর্ণ শুল্ক ব্যবস্থার অধীনে পোশাকের দাম ১৭% বৃদ্ধি পেতে পারে। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) অনুসারে, এনডিআইএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত জেনেরিক ওষুধের প্রায় ৪০% সরবরাহ করে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং সংক্রামক রোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতীয় জেনেরিক ওষুধের উপর শুল্ক আমেরিকান রোগীদের এবং হাসপাতালের জন্য খরচ বাড়াতে পারে। 

হোয়াইট হাউসের নির্দেশনামা অনুসারে, ৭ আগস্ট থেকে বিশ্বের ৬৯টি দেশের উপর ১০ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশে উচ্চ আমদানি শুল্ক হার লাগু হবে। সিরিয়ার উপর ৪১ শতাংশ, কানাডা থেকে আসা অনেক পণ্যের উপর ৩৫ শতাংশ, ব্রাজিলের জন্য ৫০ শতাংশ, ভারতের জন্য ২৫ শতাংশ, তাইওয়ানের জন্য ২০ শতাংশ এবং সুইজারল্যান্ডের জন্য ৩৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের জন্য ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক লাগু হতে চলেছে।