আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করা হবে ১০ অক্টোবর শুক্রবার, অসলো সময় সকাল ১১ টায় (ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটে)। পুরস্কারের সম্ভাব্য দাবিদারদের নিয়ে জল্পনা তীব্র হয়েছে। সর্বাধিক সোচ্চার এবং আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বারবার দাবি করে আসছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানা যুদ্ধ থামিয়েছেন, তাই এই পুরস্কারের তিনি অন্যতম দাবিদার।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের তরফে ট্রাম্পের একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘দ্য পিস প্রেসিডেন্ট’, অর্থাৎ শান্তির প্রেসিডেন্ট! নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার আগেই এই পোস্টকে ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে। বুধবার ট্রাম্প নিজেও তাঁর পুরস্কার প্রাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে মুখ খুলেছেন। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে সকল পণবন্দিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে শান্তি চুক্তির পর হোয়াইট হাউস ট্রাম্পকে এই পুরস্কারে অন্যতম দাবিদার বলে মনে করছে। এক্স-এ পোস্টের মাধ্যমে হোয়াইট হাউস সময়ের সদ্ব্যবহার করেছে। কারণ, ট্রাম্পের গাজা চুক্তি ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার ঠিক একদিন আগেই সম্পন্ন হয়েছে।
বুধবার ট্রাম্প আরও এক বার দাবি করেন, তিনি বিশ্বে সাতটি যুদ্ধ থামিয়েছেন। তালিকায় রয়েছে ভারত-পাক সংঘাতও। আরও একটি যুদ্ধ থামানোর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি আশাবাদী যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিও তিনি সামাল দিয়ে দেবেন। নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “আমার কোনও ধারণা নেই (পুরস্কার পাবেন কি না, তা নিয়ে)।” তিনি আরও বলেন, “হয়তো ওরা (নোবেল কমিটি) আমাকে এটা না-দেওয়ার একটা কারণ খুঁজে নেবে।” তার পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, কী ভাবে তাঁরা সাত যুদ্ধ থামিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করবেন আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো। এই প্রসঙ্গেই আত্মপ্রশংসার সুরে ট্রাম্পের সংযোজন, “আমার মনে হয় না ইতিহাসে কেউ এত যুদ্ধ থামিয়েছে।”
THE PEACE PRESIDENT. pic.twitter.com/bq3nMvuiSd
— The White House (@WhiteHouse)Tweet by @WhiteHouse
তবে, তাঁর অবিরাম প্রচার এবং হাইপ্রোফাইল সমর্থন সত্ত্বেও, বিশেষজ্ঞরা একমত যে ট্রাম্পকে নোবেল কমিটির পছন্দ হওয়ার সম্ভাবনা কম, অন্তত এই বছর নয়। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি নিশ্চিত করেছে যে ২০২৫ সালের শান্তি পুরষ্কারের জন্য ৩৩৮ জন প্রার্থী মনোনীত হয়েছে। এর মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি সংস্থা। ঐতিহ্য অনুসারে, মনোনীতদের নাম ৫০ বছর ধরে গোপন রাখা হবে।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, পাকিস্তান সেনার ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, কম্বোডিয়ার প্রেসিডেন্ট হুন মানেত, আমেরিকার কংগ্রেসম্যান বাডি কার্টার এবং সুইডেন এবং নরওয়ের অন্যান্য নেতারাও ট্রাম্পকে শান্তির পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন।
আরও পড়ুন: ফের বাজিমাত করলেন ট্রাম্প, ইজরায়েল-হামাসের শান্তি চুক্তি নিয়ে কী পোস্ট করলেন তিনি
নোবেল কমিটি এই বছরের পুরষ্কারের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর আগে জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু নেতানিয়াহু এবং পাকিস্তান সরকারের মনোনয়ন এই সময়সীমার পরে জমা পড়েছে। যা এই বছরের শান্তি পুরস্কারের জন্য অযোগ্য।

বর্তমান নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির উপ-প্রধান আসলে তোজে বলে, “এই ধরণের প্রচার নেতিবাচক প্রভাব ফেলে... কিছু প্রার্থী এটি পাওয়ার জন্য খুব বেশি চেষ্টা করেন এবং আমরা তা পছন্দ করি না। আমরা প্রভাবিত হওয়ার চেষ্টা না করেই একটি বন্ধ ঘরে কাজ করতে অভ্যস্ত।”
ট্রাম্পের দাবি এবং হাইপ্রোফাইল সমর্থন সত্ত্বেও, নোবেল বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন না যে ট্রাম্প ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কার জিতবেন। সুইডিশ অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পিটার ওয়ালেনস্টিন বলেছেন, “না,ট্রাম্প এই বছর জয়ী হবেন না। কিন্তু সম্ভবত পরের বছর? ততক্ষণে, গাজা সংকট সহ তার বিভিন্ন উদ্যোগের চারপাশের উত্তেজনা আরও কিছুটা থিতিয়ে যাবে।”
এই বছর নোবেল পাওয়ার দৌড়ে কোনও নির্দিষ্ট এক জন প্রার্থী এগিয়ে নেই। তবে কিছু বহুল আলোচিত প্রার্থীর মধ্যে বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উভয়ই রয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম-
- সুদানের ইমারজেন্সি রেসপন্স রুম
- রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া
- নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পরিচিত দ্য অফিস ফর ডেমেক্র্যাটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস
- জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
- প্যালেস্তাইনের শরণার্থী ত্রাণ সংস্থা UNRWA (জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা)
- ইউএনএইচসিআর (শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের হাই কমিশনার)
- আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ)
- কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস এবং রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স - উভয়ই তাদের কাজের জন্য বিশেষভাবে আলোচিত, বিশেষ করে গাজায় রেকর্ড সাংবাদিক মৃত্যুর বছরে।
এছাড়াও অন্যান্য বিশেষ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন-
- পাকিস্তানে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করার জন্য পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স এবং নরওয়েজিয়ান পার্টি পার্টিয়েট সেন্ট্রাম কর্তৃক মনোনীত পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
- আঞ্চলিক সম্প্রীতি এবং শান্তির প্রতি অঙ্গীকার এবং থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতার ভূমিকার কারণে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে মনোনীত করা হয়েছে।
- স্লোভেনীয় ইইউ সংসদ সদস্য ব্রাঙ্কো গ্রিমস বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য টেসলার সিইও এলন মাস্ককে মনোনীত করেছেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মানগুলির মধ্যে একটি। এটি সুইডিশ শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯০১ সালে প্রথম নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। নোবেলের উইল অনুসারে, শান্তি পুরস্কার সেই ব্যক্তিকে দেওয়া উচিত যিনি দেশগুলির মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধের জন্য এবং স্থায়ী সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি বা হ্রাস এবং শান্তি কংগ্রেস গঠন ও বিস্তারের জন্য সর্বোত্তম কাজ করেছেন।
নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি শান্তি পুরস্কার পরিচালনা করে। মনোনয়নের পরে কমিটি সবচেয়ে ‘আকর্ষণীয় এবং যোগ্য প্রার্থীদের’ সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে এই তালিকাভুক্ত নামগুলি কমিটির সদস্য এবং বহিরাগত বিশেষজ্ঞ উভয়ের দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়। অন্যান্য নোবেল পুরস্কার সুইডেনে দেওয়া হলেও, শান্তি পুরস্কার নরওয়ের অসলোয় দেওয়া হবে।
