আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক বছর আগের ঢাকা, এক বছর পরের নেপাল। ভৌগোলিক দূরত্ব বহু। তবে এক ঘটনা কোথাও গিয়ে সরলরেখায় কি মিলিয়ে দিচ্ছে ঢাকার রাস্তা এবং কাঠমাণ্ডুর রাস্তাকে? সোমের মৃত্যু মিছিল এবং মঙ্গলবারের দাবির পর, এই প্রশ্ন আরও জোরাল হয়েছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনে ২০২৪-এ উত্তপ্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। পথে নামেন হাজার হাজার পড়ুয়ারা। সরকার বিরোধী স্লোগান, সরকারের নানা বিষয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান, প্রধানমন্ত্রীর দেশত্যাগ।

একেবারে শেষ পয়েন্টের আগের পর্যন্ত হুবহু মিল। সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে যে বিক্ষোভের সূত্রপাত, নির্দেশিকা প্রত্যাহারের পরেও প্রতিবাদের গনগনে আঁচ কাঠমাণ্ডুর রাস্তায়। নেপাল জুড়ে মঙ্গলবারেও তাণ্ডব চালাচ্ছে জেন-জি-রা।  সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতির বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচণ্ড, শের বাহাদুর দেউবা এবং জ্বালানি মন্ত্রী দীপক খড়কার বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে উত্তেজিত জনতা। প্রধানমন্ত্রী ওলির উপর পদত্যাগের চাপ ক্রমশ বাড়ছে। পরিস্থিতি বিচারের ওলির সরকারের একাধিক মন্ত্রীদের অন্যত্র সরানো হচ্ছে বলেও খবর সূত্রের। 

একদিকে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে উঠে আসছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবী, অন্যদিকে চাপ বাড়াচ্ছেন মন্ত্রীরাও। একের পর এক মন্ত্রী সরকার থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ আবার সরাসরি পদত্যাগ করছেন। ফলে সরকারের ভিত আরও টালমাটাল হয়ে উঠেছে। নেপালের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী-সহ মোট ২৫জন মন্ত্রী রয়েছেন। সূত্রের খবর, বেশকিছু সাংসদ পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে নয়া সংসদ গঠনের ডাক দিয়েছেন। সোমবারের মৃত্যুমিছিলের পর, নৈতিক কারণে জোট সরকারে নেপালি কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিত্বকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার কৃষিমন্ত্রী রামনাথ অধিকারী পদত্যাগ করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রদীপ পাউডেল সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনিও পদত্যাগ করবেন। তেমনটাই খবর সূত্রের। জানা গিয়েছে, তিনি কারণ হিসেবে সাফ জানিয়েছেন, এমন সরকারের সঙ্গে আর যুক্ত থাকতে চান না তিনি। ইতিমধ্যে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী তেজু লাল চৌধুরী এবং জলমন্ত্রী প্রদীপ যাদবও পদত্যাগ করেছেন। তেজু লাল চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, সরকার তরুণদের অভিযোগ সম্পর্কে অবগত ছিল কিন্তু উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিধায়ক অসীম শাহও পদত্যাগ করেছেন। কংগ্রেস নেতা শেখর কৈরালা তাঁর ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সূত্রের খবর তেমনটাই।

 

ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, নেপালের সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এই বিষয়েও হুবহু ঢাকার ছায়া খুঁজে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সূত্রের খবর, সূত্রের খবর, এবার প্রধানমন্ত্রী ওলিকে ইস্তফা দিতে বলেছেন নেপালের সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল। প্রথমে পদ, কুরশি না চাইলেও শেষমেষ বিক্ষোভের অভিঘাত আঁচ করতে পেরেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি দুবাই যাওয়ার মনস্থির করেছেন। নিরাপদে যাতে দেশ ছাড়া যায় সেই জন্য সেনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি, তেমনটাই খবর সূত্রের। 

 

নেপালী প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র ইন্ডিয়া টুডে টিভিকে জানিয়েছে যে, ওলি চিকিৎসার অজুহাতে দুবাই যাওয়ার কথা ভেবেছেন। বেসরকারি বিমান সংস্থা, হিমালয় এয়ারলাইন্সকে প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্ট্যান্ডবাইতে থাকতে বলা হয়েছে বলেও খবর মিলেছে। মন্ত্রীরা মন্ত্রিসভা ত্যাগ করছেন। ওলি ইতিমধ্যেই তাঁর উপ-প্রধানমন্ত্রীকে প্রশাসন চালানোর ভার দিয়েছেন। এদিকে, পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং একটি অর্থপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য ওলি আজ (মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫) সন্ধ্যা ছয়'টায় একটি সর্বদলীয় বৈঠকও ডেকেছেন।