আজকাল ওয়েবডেস্ক: ৭ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান ইজরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ২০,১৭৯ শিশু নিহত হয়েছে, এবং ১২ লক্ষাধিক শিশু খাদ্য থেকে বঞ্চিত। মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রতি ৫২ মিনিটে একজন শিশু নিহত হচ্ছে গাজায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহত শিশুদের মধ্যে ১,০২৯ জন এক বছরের নিচে, ৫,০৩১ জন পাঁচ বছরের নিচে, এবং ৪২০ শিশু যুদ্ধের মধ্যেই জন্ম নিয়ে নিহত হয়েছে। এছাড়া, ৫৮,৫৫৪ শিশু এখন অনাথ, এবং ৯,১৪,১০২ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। চিকিৎসা সরিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ৫,৫৮০ শিশু।
২০২২ সালে যেখানে শিশুদের টিকাকরণ কভারেজ ছিল ৯৮.৭%, ২০২৫ সালে তা নেমে এসেছে ৮০%-এ। যুদ্ধ চলাকালে ১,১০২ শিশু অঙ্গচ্ছেদের শিকার হয়েছে। জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশন ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে, ইজরায়েল গাজায় ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। তবুও, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত তথাকথিত “গাজা শান্তি পরিকল্পনা”র ২০ দফা প্রস্তাব সত্ত্বেও ইজরায়েল অব্যাহত রেখেছে বোমাবর্ষণ।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ঐতিহাসিক গাজা শান্তি চুক্তি: নেতানিয়াহুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ মোদি
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর পর্যন্ত গাজায় ৬৭,১৭৩ জন মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১,৬৯,৭৮০ জন আহত। নিহতদের মধ্যে ২০,১৭৯ জন শিশু (৩০%), ১০,৪২৭ জন নারী (১৬%), ৪,৮১৩ জন প্রবীণ (৭%), এবং ৩১,৭৫৪ জন পুরুষ (৪৭%)। এছাড়া, ৪,৯০০ জন অঙ্গচ্ছেদ ও স্থায়ী প্রতিবন্ধকতার শিকার। প্রতিদিন প্রায় ১৩টি পরিবার গণহত্যার শিকার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৮,৯১০টি পরিবার সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
২০২৫ সালে গাজায় ৪,১৬৩টি গর্ভপাত, ২,৪১৫টি অকাল প্রসব, এবং ২৭৪টি নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে। পুষ্টিহীনতাজনিত মৃত্যু ২০২৩ সালে যেখানে ছিল মাত্র ৪, ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৮ জনে। এই মৃত্যুর মধ্যে ১৫৭ জন (৩৪.১%) শিশু, ১৮৮ জন (৪০.৮%) প্রবীণ, ৪৪ জন (৯.৫%) নারী, এবং ৭২ জন (১৫.৬%) পুরুষ। আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত পাঁচ বছরের নিচের ১৪,৩৮৩ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, যার মধ্যে ৩,৪৬৬ জন গুরুতরভাবে পুষ্টিহীন—যা জানুয়ারি ২০২৫-এ ছিল মাত্র ৪৫২ জন।
গাজার সব ৩৮টি হাসপাতাল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি সম্পূর্ণ বন্ধ, এবং ১৩টি আংশিকভাবে চালু। ১৫৭টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ১০৩টি বন্ধ এবং ৫৪টি আংশিক কার্যকর। হাসপাতালের বেড দখলহার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের ৮২% থেকে বেড়ে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাঁড়িয়েছে ২২৫.৫%। ২০২২ সালে যেখানে গাজায় ৩,৫৬০টি হাসপাতাল বেড ছিল, এখন তা নেমে এসেছে ১,৫৭৮টিতে।
ইজরায়েলি সেনাদের হাতে ৩৬২ জন স্বাস্থ্যকর্মী বন্দি, ১,৭০১ জন নিহত, এবং ২১১টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ৭টি এমআরআই মেশিন, ১৭টির মধ্যে ১০টি সিটি স্ক্যানার, ৩৫টির মধ্যে ২৫টি অক্সিজেন স্টেশন, এবং ১১০টির মধ্যে ৬১টি পাওয়ার জেনারেটর। গাজার ২৬০টি জলের কূপের মধ্যে মাত্র ১১৬টি সচল, ফলে প্রতিজনের দৈনিক জল প্রাপ্যতা ৮৪.৬ লিটার থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ লিটার।
আল জাজিরা ইংরেজির ৮ অক্টোবরের লাইভ আপডেট অনুযায়ী, গাজা শহরে প্রবল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যা ছিল দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকবাহী সাঁজোয়া যান ব্যবহারের ফল। এ ঘটনাগুলো ঘটছে এমন সময়ে, যখন মিশরে তৃতীয় দফার বিরতি আলোচনাও চলছে।জাতিসংঘের রিপোর্টে গাজায় বর্তমান পরিস্থিতিকে “মানব ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবুও, ইজরায়েলি আগ্রাসন থামার কোনো ইঙ্গিত এখনো দেখা যাচ্ছে না।
