আজকাল ওয়েবডেস্ক: পৃথিবী থেকে ৩২২ মিলিয়ন কিলোমিটার (প্রায় ২০০ মিলিয়ন মাইল) দূরে অবস্থিত গ্রহাণু বেন্নুর ধুলো এবং পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে নাসা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছে। সেই ধুলো এবং পাথর সূর্যেরও পূর্ববর্তী সময়ের। এই আবিষ্কার সৌরজগতের আদিম রহস্য এবং জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হাতে এল নাসার।
বিজ্ঞানীরা বেন্নু থেকে পাওয়া নমুনায় প্রাক-সৌর কণা শনাক্ত করেছেন। ‘স্টারডাস্ট’ নামে পরিচিত এই কণাগুলি কোটি কোটি বছর আগে মৃত নক্ষত্রের চারপাশে গঠিত হয়েছিল। যা সূর্যেরও জন্মের আগে এবং প্রায় অপরিবর্তিত ছিল।
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম এবং অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক দল নির্ধারণ করেছে যে এই কণাগুলি পৃথিবীতে পাওয়া উল্কাপিণ্ডের চেয়ে আমাদের সৌরজগতের শুরুর আরও ভাল আভাস দেয়।
নাসার ঐতিহাসিক মিশন
২০১৬ সালে শুরু হওয়া নাসার ওএসআইআরআইএস-রেক্স মিশন ২০২০ সালে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। মহাকাশযানটি তার রোবোটিক হাত ব্যবহার করে বেন্নুর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২০ গ্রাম ধুলো এবং পাথর সংগ্রহ করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, মিশনটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছিল এবং ২০২৩ সালে নমুনা ক্যাপসুলটি নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। এই নমুনাগুলির রাসায়নিক বিশ্লেষণ মহাবিশ্বের প্রাচীনতম কিছু রহস্য উন্মোচন করেছে।
গ্রহাণু বেন্নুর রহস্য
গবেষকদের বিশ্বাস, বেন্নুর মূল গ্রহাণুটি সৌরজগতের বাইরের অঞ্চলে, সম্ভবত শনির কক্ষপথের বাইরে, ঠান্ডা গ্যাস এবং ধুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছিল। নমুনায় বিভিন্ন ধরণের উপকরণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাইরের সৌরজগতের জৈব পদার্থ, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস এবং ধুলো এবং উচ্চ-তাপমাত্রার কণা যা বাইরের দিকে যাওয়ার আগে সূর্যের কাছে তৈরি হয়েছিল।
জল এবং প্রাণের লক্ষণ
ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষণায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগের এই নমুনাগুলিতে জলের সঙ্গে জড়িত রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। যে সময় পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে গঠিত হয়নি। পূর্ববর্তী গবেষণায় ধারণা করা হয়েছিল যে বেন্নু থেকে আনা কণাগুলিতে প্রাণের সৃষ্টির প্রমাণ মিলতে পারে। এই আবিষ্কারটি এই তত্ত্বকে শক্তিশালী করে যে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি মহাকাশ থেকে উদ্ভূত হতে পারে।
মহাবিশ্বের প্রাথমিক ঝলক
গবেষণার সঙ্গে জড়িত অধ্যাপক সারা রাসেল বলেন, “সূর্যের জন্মের সময় আমরা বাইরের সৌরজগতের এক অনন্য আভাস দেখতে পাচ্ছি। কিছু কণা কোটি কোটি বছর ধরে প্রায় অস্পৃশ্য রয়ে গিয়েছে, যা গ্রহগুলি যে পরিবেশে তৈরি হয়েছিল তা আমাদের সামনে তুলে ধরছে।”
নাসার এই অভিযান মানব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, কারণ এই কণাগুলি আজও কোটি কোটি বছর আগের মতোই বিশুদ্ধ, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত।
