আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারির প্রধান অভিযুক্ত পলাতক হীরে ব্যবসায়ী নীরব মোদি লন্ডনের একটি আদালতে জানিয়েছেন যে, তাঁর প্রত্যর্পণ মামলার পুনঃশুনানি শুরু হলে চমকপ্রদ ঘটনা সামনে আসবে। ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যের কারাগারে থাকা এই ভারতীয় হীরেসম্রাটের বিরুদ্ধে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতারণা এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে।


শুক্রবার লন্ডনের রয়্যাল কোর্টস অব জাস্টিসে হাইকোর্টের বিচারক সাইমন টিঙ্কলারের সামনে হাজির হন ৫৪ বছর বয়সী নীরব মোদি। তবে এটি ছিল আলাদা একটি মামলার শুনানি—যেখানে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলারের অনাদায়ী ঋণের মামলা করেছে। সেখানেই মোদি দাবি করেন, “তারাআমার প্রত্যর্পণের প্রসঙ্গ তুলছে… কিন্তু আমি এখন এখানে আছি। এবার এমন কিছু ঘটতে চলেছে যা সত্যিই চমকপ্রদ হবে, আমি আগে কখনও এই কথাগুলো ব্যবহার করিনি।”


নীরব মোদি আদালতে আরও বলেন যে তিনি “অত্যন্ত আশাবাদী” যে হয় তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে বা অন্তত জামিন দেওয়া হবে। কারণ আদালত তাঁর নতুন প্রমাণ গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে—যা এই ধরনের মামলায় সাধারণত খুবই কঠিন ব্যাপার।

আরও পড়ুন: সোনার বাজারে আরও বড় কিছু হতে চলেছে, আশঙ্কিত অর্থনীতিবিদরা


নীরব মোদির প্রত্যর্পণ মামলার শুনানি আগামী নভেম্বরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যখন ভারত সরকার তাঁদের পক্ষ থেকে লিখিত প্রতিক্রিয়া জমা দেবে। মোদি ইতিমধ্যে আপিল পুনরায় খোলার আবেদন করেছেন, যাতে তাঁর প্রত্যর্পণ রোধ করা যায়।


আদালতে মোদি নিজেই নিজের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে হাজির হন, যাকে বলা হয় “litigant in person”। নিজের হাতে লেখা দীর্ঘ নোট থেকে তিনি বক্তব্য পড়ছিলেন। এক পর্যায়ে কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “আমি জানি এটি প্রতিপক্ষীয় প্রক্রিয়া, তারা আমার বিরুদ্ধে যেকোনও কিছু বলতে পারে। কিন্তু তারা শুধু অনুমান করেই যাচ্ছে। আমি বলব, একদিন কারাগারে কাটিয়ে দেখুক… কিছুটা সাধারণ বুদ্ধি থাকা দরকার।”


ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া আদালতে জানিয়েছে, দুবাই-ভিত্তিক তাঁর সংস্থা Firestar Diamond FZE-কে দেওয়া ঋণের বিপরীতে মোদি ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দিয়েছিলেন। এখন সেই গ্যারান্টি অনুযায়ী টাকা আদায় করতে চায় ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, মামলাটি স্থগিত রাখা হলে সেটি অন্যায্য হবে এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা এই দাবি আরও অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যাবে।


২০১৮ সালে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের প্রায় ১৩,০০০ কোটি টাকার জালিয়াতির মামলায় নীরব মোদি ভারতের অন্যতম বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির কেন্দ্রীয় চরিত্রে উঠে আসেন। তদন্তে উঠে আসে যে, তাঁর ও তাঁর সহযোগীদের মাধ্যমে বিদেশি লেটার অব আন্ডারটেকিং ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল অর্থ তোলা হয়েছিল। এরপর থেকেই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং ২০১৯ সালে লন্ডনে গ্রেফতার হন।


বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের ওয়ান্ডসওয়ার্থ জেলে বন্দি আছেন তিনি। গত কয়েক বছরে ভারত সরকার তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য ধারাবাহিক আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এবার তাঁর “সেন্সেশনাল ডেভেলপমেন্ট”-এর হুঁশিয়ারি নতুন কৌতূহল তৈরি করেছে—এই মন্তব্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে কি আসন্ন আইনি মোড়, না কি আরেকটি কৌশলগত চাল? তা জানার জন্য নজর থাকবে আগামী মাসের শুনানিতে।