আজকাল ওয়েবডেস্ক: শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশে বিরোধী মত দমনের প্রবল অভিযানের অভিযোগ উঠছে। আগস্টে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন, যা নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, শুরুতে দ্রুত গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করা হয়নি। বরং বিভিন্ন মহল বলছে—সরকার দমননীতি, নজরদারি ও গ্রেপ্তার অভিযানে মনোনিবেশ করছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ পর্যন্ত অসংখ্য মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় শেখ হাসিনার সমর্থনে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ এই পদক্ষেপকে “ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড” বলে আখ্যা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: টেক্সাসে ভারতীয়র শিরচ্ছেদ: মুখ খুললেন ট্রাম্প, বাইডেনকে দুষে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আরও কড়া হুঙ্কার

প্রতীকী প্রতিবাদকেও টার্গেট করা হচ্ছে। মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী নাহিদা নূর সুইটি নামাজ-পরবর্তী একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দেওয়ায় আটক হন এবং তাকে আন্দোলনে অর্থ যোগানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে মুক্তিযোদ্ধা আবু আলম শহীদ খান, আইনবিদ অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কুরজোন, এবং সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার মতো খ্যাতনামা ব্যক্তিদেরও হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: এই প্রথম নয়, ২০০৮ থেকে দেশবাসী রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখেছেন ১৪ বার! সব দফার ক্ষোভ কি বেরিয়ে এল ওলি-সরকারের উপরে?

ছাত্রনেতা শেখ ইবনে সাদিক ও আমির হামজাকে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এসব গ্রেপ্তার আসলে বিরোধী সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে, জননিরাপত্তা রক্ষার জন্য নয়।
চট্টগ্রামের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও অনেকে মামলায় জড়িয়েছেন। যদিও স্থানীয়দের দাবি, গ্রেপ্তার হওয়া অনেকেরই হিংসার ঘটনার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র ছিল না।

এই সবকিছু মিলিয়ে দেশে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ নাগরিকরা প্রকাশ্যে মত প্রকাশে অনীহা দেখাচ্ছেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে দ্বিধা করছেন। আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও নীরবতা যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ইউরেশিয়া রিভিউ–এর সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শুধু ভিন্নমতকেই স্তব্ধ করছে না, বরং রাজনৈতিক বৈধতার সীমানাকেও নতুন করে নির্ধারণ করছে। প্রবন্ধে সতর্ক করা হয়—শুধুমাত্র একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনই গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে। তা না হলে দেশ আরও গভীরভাবে স্বৈরশাসনের দিকে ধাবিত হবে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন প্রশ্ন বাড়ছে—প্রতিশ্রুত গণতান্ত্রিক রূপান্তর কি কার্যকর হবে, নাকি দমননীতিই নতুন বাস্তবতায় পরিণত হবে?