আজকাল ওয়েবডেস্ক:  সম্প্রতি সূর্য অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় দুই দশক তুলনামূলক শান্ত থাকার পর সূর্য আবারও তেজ বাড়াতে শুরু করেছে। প্রবল সৌর বায়ু ও তীব্র সৌর ঝড়ের ফলে বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যন্ত মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।


গত বিশ বছর ধরে সূর্যের কার্যকলাপ তুলনামূলকভাবে মন্থর ছিল। সৌর বায়ুর গতি ধীর হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। নাসার গবেষণা অনুযায়ী, সূর্যের সৌর বায়ু ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। সৌর বায়ু মূলত সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে নির্গত বৈদ্যুতিকভাবে আধানযুক্ত কণার প্রবাহ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই কণাগুলোর তাপমাত্রা, গতি ও ঘনত্ব দ্রুত বাড়ছে। পাশাপাশি এগুলো এখন আরও শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এই পরিবর্তন এতটাই অপ্রত্যাশিত যে, বিজ্ঞানীরা হতবাক। তারা ভেবেছিলেন সূর্য আরও দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় থাকবে, কিন্তু বাস্তবে সেটি যেন হঠাৎ “জেগে উঠেছে।”

আরও পড়ুন: সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই নতুন হারে জিএসটি: প্রধানমন্ত্রী


সৌর ঝড় যত তীব্র হবে, পৃথিবীতে তার প্রভাবও তত মারাত্মক হবে। 
স্যাটেলাইট যোগাযোগ ও জিপিএস: সৌর ঝড় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে আঘাত করলে স্যাটেলাইট সিগন্যাল বিঘ্নিত হতে পারে। ফলে বিমান চলাচল, নৌপরিবহন ও স্মার্টফোনের নেভিগেশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।


বিদ্যুৎ গ্রিড: প্রবল জিওম্যাগনেটিক ঝড় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে শর্ট সার্কিট ঘটিয়ে ব্যাপক ব্ল্যাকআউট সৃষ্টি করতে পারে।


মহাকাশ ভ্রমণ: পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র আমাদের সৌর বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু সূর্যের তীব্র কার্যকলাপে এই সুরক্ষা স্তর ছোট হয়ে আসতে পারে, যার ফলে মহাকাশে থাকা নভোচারীরা আরও বড় ঝুঁকির মুখে পড়বেন।


স্যাটেলাইট ক্ষতি: উচ্চ-শক্তির সৌর কণা কৃত্রিম উপগ্রহের যন্ত্রাংশ নষ্ট করতে পারে, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে।


এই সৌর ঝড়ের ফলে অরোরা বা উত্তরীয় আলো পৃথিবীর আরও দক্ষিণাঞ্চলেও দেখা যেতে পারে। যদিও এটি এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য, এর আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে আমাদের প্রযুক্তি নির্ভর জীবনে গুরুতর বিপদের সম্ভাবনা। সূর্যের এমন উত্থান-পতনের ইতিহাস নতুন নয়। ১৭৯০ থেকে ১৮৩০ সালের মধ্যে সূর্য দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় ছিল, যা বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারেননি। স্বল্পমেয়াদি সৌর কার্যকলাপের পূর্বাভাস কিছুটা জানা গেলেও, দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা এখনও এক রহস্য।


বর্তমানে সূর্যের ১১ বছরের চক্র ২০২৫-২০২৬ সালের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে আগামী কয়েক বছরে আরও ঘন ঘন ও তীব্র সৌর ঝড় দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। নাসার বিজ্ঞানী জেমি জাসিনস্কির ভাষায়, “আমরা ভেবেছিলাম সূর্য দীর্ঘদিন শান্ত থাকবে, কিন্তু বাস্তবে সে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।” এই অপ্রত্যাশিত আচরণ বৈজ্ঞানিক মহলকে যেমন নতুন গবেষণার পথে ঠেলে দিচ্ছে, তেমনি পৃথিবীর প্রযুক্তি নির্ভর সভ্যতাকেও সতর্ক করে দিচ্ছে। এককথায়, সূর্যের এই নতুন সক্রিয়তা এখনও রহস্যে ঘেরা। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—আসন্ন সময়ে সৌর ঝড় আরও বাড়বে, আর আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে তার সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলার জন্য।