আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১ আগস্ট পথকুকুরদের নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালত যে রায় দিয়েছিল, দেশজুড়ে প্রবল আলোচনা-সমালোচনা হয় তার। দেশের কোনায় কোনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মানুষ। ২২ আগস্ট শীর্ষ আদালত ১১ তারিখের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়। সঙ্গে দেওয়া হয় বেশকিছু নির্দেশ। কিন্তু তারপরেও পথকুকুর সংক্রান নানা ঘটনা ঘটে চলেছে দেশে। গাজিয়াবাদে যা ঘটে গিয়েছে, তাতে এবার অনেকের আতঙ্ক, শীর্ষ আদালতের রায়ের পর, নানা জায়গায় নিজেদের মতো করে কি আইন তুলে নেবেন সাধারণ মানুষ?
২২ বছরের যুবতী, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনাটি ভাগ করে নিয়েছেন। তা নজর কাড়ে নেটিজেনদের। কী জানিয়েছেন সীমা রানী নামের ওই যুবতী? তাঁর দাবি, তিনি এবং তাঁর এক বন্ধু, বহুদিন ধরেই এলাকার পথকুকুরদের খাওয়ান। শুক্রবার রাতেও অন্যান্যদিনের মতোই তিনি খাওয়াচ্ছিলেন দু' জনে পথকুকুরদের। আচমকা এক যুবক, অতি দ্রুত গতিতে গাড়ি নিয়ে তাঁদের সামনে দাঁড়ান। কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে গেলেও, ওই যুবক গাড়ি তেকে নেমে সীমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ। যুবকের নাম কমল কিশোর খান্না। বাদানুবাদ বাড়লে যুবক দুই যুবতীকে আর নানা প্রকার হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ইতিমধ্যেই।
উল্লেখ্য, শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ১১ আগস্টের নির্দেশাবলীতে বদল করেছে শীর্ষ আদালত। আগের রায়ে বলা হয়েছিল, দিল্লি এনসিআর এলাকায়, পথকুকুর আর রাস্তায় থাকতে পারবে না। তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে অন্যত্র। তারপর থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ, পশুপ্রেমীরা। শুক্রবার শীর্ষ আদালত ওই রায়ের পরিবর্তন করেছে।
এদিন জোর দেওয়া হয়েছে পথকুকুরদের জীবাণুমুক্ত করার এবং টিকা দেওয়ার বিষয়ে। শুক্রবার আদালত জানায়, পথকুকুরদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে জীবাণুকরণ প্রতিষেধক এবং বন্ধ্যাত্বকরণ টিকা দেওয়ার পর, আবার যে জায়গার কুকুর, সেই এলাকাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। ব্যতিক্রম হিসেবে, হালমা চালাতে পারে, অর্থাৎ হিংস্র কিংবা জলাতঙ্ক ঘটাতে পারে, এমন কুকুরদের ছাড়া যাবে না বলেও জানানো হয়েছে বলে খবর সূত্রের।
একই সঙ্গে সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, প্রকাশ্য রাস্তায় আর পথকুকুরদের খাওয়ানো যাবে না। পথকুকুরদের খাওয়ানোর জন্য আলাদা, নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করতে হবে।
শনিবার জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের একদিন পর থেকেই তৎপর হয়ে পড়ল দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন(MCD)। পথকুকুরদের খাওয়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ফিডিং জোন তৈরি করতে তৎপর হয়েছে পুরসভা। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সম্ভাব্য স্থান শনাক্তের কাজ শুরু করেছে সিভিক বডি। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে প্রকাশ্য রাস্তা ও জনসমাগমের স্থানে পথকুকুর খাওয়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে নির্দিষ্ট ফিডিং জোনে খাওয়ানো যাবে পথকুকুরদের। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে, পুরসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপার্সন সত্য শর্মা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিকল্পনাটি সময়মতো কার্যকর করতে হবে যাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করা যায়। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং প্রাণী কল্যাণ নিশ্চিত হয়’। দিল্লি পুরসভা বর্তমানে দু’টি স্থানে—দ্বারকা সেক্টর ২৯ ও বেলা রোডে পথকুকুরদের জন্য আশ্রয় তৈরি করার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে। কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘উভয় স্থানেই পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে, সঙ্গে অ্যানিমাল বার্থ কন্ট্রোল কেন্দ্র এবং কেনেল রয়েছে’। সত্য শর্মা আরও বলেন, পথকুকুরদের ব্যাপক স্টেরিলাইজেশন এবং রেবিস আক্রান্ত বা আগ্রাসী কুকুরদের আশ্রয়ে রাখা জরুরি।
