আজকাল ওয়েবডেস্ক: সৌন্দর্য এবং স্থাপত্যের জন্য প্রশংসিত বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম তাজমহল। তবে এই স্থাপত্য ঘিরেই রয়েছে রহস্যও। এতেই বিভ্রান্ত মানুষ। তাজমহলের সবচেয়ে বড় রহস্য হল এর বেসমেন্টে লুকানো ২২টি তালাবদ্ধ ঘর। এই ঘরগুলি কোনওভাবেই কখনও পর্যটকদের জন্যখোলা হয় না, এখানে সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই।

এই ঘরগুলি তাজমহলের মূল কাঠামোর নীচে অবস্থিত। রয়েছে চারটি বড় এবং ১৮টি ছোট ঘর। এিসব ঘর কয়েক দশক ধরে তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এগুলি বিখ্যাত চামেলি মেঝের নীচে অবস্থিত এবং সেগুলিতে প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ। ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা বিভাগ (ASI) এই ঘরগুলি তালাবদ্ধ করে রেখেছে। এগুলির ভিতরে কী আছে সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে খুব বেশি কিছু জানানো হয়নি। ফলে তাজমহলের বেসমেন্টের ২২টি ঘর ঘিরে কৌতূহল তুঙ্গে। 

কেন বন্ধ ওই ঘরগুলি? এর সঠিক কারণ কেউ জানে না। তবে কর্তৃপক্ষের মতে, এই গোপনীয়তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাজমহলের সুরক্ষা। কিছু লোক বিশ্বাস করে যে, এই কক্ষগুলিতে রাজকীয় ধন বা গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক গোপনীয়তা থাকতে পারে। অতীতে, এই দরজাগুলিতে লাল পাথরের ফ্রেম ছিল, যা এখন ইট দিয়ে সিল করা হয়েছে, যা রহস্যকে আরও গভীর করে তুলেছে।

মজার বিষয় হল, তাজমহলের চারটি মিনারই এই ভূগর্ভস্থ এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত। এই স্তম্ভগুলি মূল গম্বুজটিকে শোভা বৃদ্ধি করে। এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার পথগুলিও এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত কাঠামোগত ক্ষতি রোধ করার জন্যই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।

এমন গল্পও রয়েছে যে শাহজাহান এবং মমতাজের আসল কবরগুলি এই তালাবদ্ধ কক্ষগুলির ভিতরে থাকতে পারে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, দর্শনার্থীদের দেখা কবরগুলি কেবল প্রতীকী, এবং আসল সমাধিগুলি বেসমেন্টে রয়েছে। তবে, এর কোনও পোক্ত প্রমাণ নেই, কারণ এই কক্ষগুলি কখনও জনসাধারণ বা গবেষকদের জন্য খোলা হয়নি।

কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ব্রিটিশ শাসনকালে এই ঘরগুলি সিল করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা গুপ্তধনের সন্ধানের সময় এইসব করেছে। পরে, সংরক্ষণের নামে এগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে, দরজাগুলি বন্ধই রয়ে গিয়েছে।

এই ঘরগুলিতে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। নিরাপত্তার জন্য প্রহরী এবং ক্যামেরা রয়েছে। সরকারি আধিকারিকদের দাবি যে, এই ঘরগুলি খোলার ফলে তাজমহলের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ফলে তারা এগুলি সিল রাখা হয়েছে। 

অনেকে বিশ্বাস করেন যে, ওই ঘরগুলিতে সোনা বা রূপার তৈরি জিনিসপত্র, অথবা প্রাচীন রাজকীয় নথি থাকতে পারে। অন্যরা মনে করে যে, মমতাজ মহলের আসল বিশ্রামস্থল এবং রাজকীয় জিনিসপত্র সেখানে লুকিয়ে থাকতে পারে। তবে, ইতিহাসবিদ এবং বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে কোনও নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি। 

এই ঘরগুলির দেখভালের দায়িত্ব এএসাই-এর। তারা জানিয়েছে যে, ওই স্মৃতিস্তম্ভের কাঠামোটি সংবেদনশীল এবং যদি এটি বিঘ্নিত হয় তবে ক্ষতি হতে পারে। দূষণ এবং পরিবর্তিত আবহাওয়াও ঝুঁকি তৈরি করে, তাই এগুলি তালাবদ্ধ রেখে স্মৃতিস্তম্ভকে রক্ষা করার একটি উপায় হিসাবে দেখা হয়।

এই ঘরগুলি কখনও খোলা হবে কিনা তা এখনও অজানা। বিশেষজ্ঞরা ক্ষতি না করে ভিতরের অংশ স্ক্যান করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করছেন। যদি একদিন এগুলি খোলা হয়, তবে তাজমহলের ইতিহাস বোঝার পদ্ধতি বদলে যেতে পারে। ততক্ষণ পর্যন্ত, ২২টি তালাবদ্ধ ঘরের রহস্য প্রজন্মের পর প্রজন্মের কৌতুহল বাড়াবে।