আজকাল ওয়েবডেস্ক: তখন দুপুর ১.৩৯ মিনিট। তারপরের এক মিনিটেই ভয়ঙ্করকাণ্ড। ৬২৫ ফুট উচ্চতা থেকে চিকিৎসকদের হস্টেলের উপর পড়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। ঠিক কী কারণে ভেঙে পড়ল যাত্রীবাহী বিমানটি? তাই নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। তবে প্রকৃত কারণ জানা যাবে ব্ল্যাক বক্সের মাধ্যমে। যাবতীয় তদন্ত এগোবে এই ব্ল্যাক বক্সের উপর ভিত্তি করেই। 

ব্ল্যাক বক্স আদতে কী?

উৎপত্তি:
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, ১৯৫৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী ডেভিড ওয়ারেন ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের ধারণাটি নিয়ে এসেছিলেন। ওয়ারেন ১৯৫৩ সালে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক জেট বিমান, ধূমকেতুর দুর্ঘটনার তদন্ত করছিলেন এবং ভেবেছিলেন বিমান দুর্ঘটনা তদন্তকারীদের জন্য ককপিটে কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিং রাখা সহায়ক হবে, অস্ট্রেলিয়ান প্রতিরক্ষা বিভাগ তাঁর মৃত্যুর পর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

১৯৫৬ সালে ওয়ারেন একটি প্রোটোটাইপ ডিজাইনও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে ডিভাইসটি কতটা মূল্যবান হতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলিতে এটি ইনস্টল করা শুরু করতে বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছিল। ওয়ারেনের বাবা ১৯৩৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন।

ব্ল্যাক বক্স দেখতে কেমন?
ব্ল্যাক বক্স কমলা বর্ণের হয়। এর নেপথ্যে রয়েছে আছে বিজ্ঞান। মূলত দুর্ঘটনা হলে, যাতে দ্রুত এটি খুঁজে পাওয়া যায় তাই কমলা রঙের হয়ে তাকে।

কী দিয়ে তৈরি?
ব্ল্যাক বক্সগুলি উচ্চ আঘাত, আগুন এবং গভীর সমুদ্রের চাপ সহ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, টাইটানিয়াম বা স্টেইনলেস স্টিলের মতো শক্তিশালী উপকরণ দিয়ে তৈরি।

ব্ল্যাক বক্স কী কাজ করে? 
এটিকে মূলত বলা হয় ফ্লাইট রেকর্ডার। যা কিনা মূলত ককপিটের যাবতীয় অডিও রেকর্ড করে রাখে। এবং বিমানের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জমা রাখে। আর এর উপর ভিত্তি করেই ফরেন্সিক টিম দুর্ঘটনার কারণের উৎস খুঁজে পায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পাইলটের ভূল কিংবা অন্য কারও দ্বারা ভূল নাকি যান্ত্রিক ত্রুটি কোনটা দায়ী? সব জানা যায় ব্ল্যাক বক্সের মাধ্যমে। 

কোথায় থাকে?
দুর্ঘটনায় বিমানের পিছনের অংশের ক্ষিতি কম হয় বলে বিমানের পিছন দিক বা লেজের অংশে থাকে ব্ল্যাক বক্স। এটি বিমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। এই যন্ত্র দুর্ঘটনার সময় ঠিক কী সিচ্যুয়েশন বিমানের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, গোটা ঘটনার পুননির্মান করে ফেলে এই ডিভাইস। এবার আসা যাক, ককপিটের অডিও রেকর্ড বলতে ঠিক কী কী রেকর্ড করে এই ডিভাইস? ককপিটে পাইলটের কথোপকথন, ইঞ্জিনের নয়েজ এবং রেডিও মাধ্যমে কী কী বার্তা গিয়েছে, তার যাবতীয় হালহদিশ দিয়ে দেয় এই ব্ল্যাক বক্স। কারণ তদন্তকারীরা সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখে ইঞ্জিন নয়েজকেই।  ইঞ্জিন নয়েজ থেকেই বুঝে নেওয়া হয়, দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে কতটা স্পিডে চলছিল ইঞ্জিন, ঠিক কোন কোন সিস্টেমগুলি ফেল করে গিয়েছিল? কী কী সতর্কবার্তা ছিল, তাও জানান দেয় এই ডিভাইস।  

ব্ল্যাক বক্স মূলত দুটি প্রধান বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়। একটি হল CVR এবং অপরটি FDR। CVR হল ককপিট ভয়েজ রেকর্ডার । যার কাজ মূলত অন্তিম দু'ঘন্টার ককপিটের যাবতীয় আওয়াজ কথোপকথন এবং সতর্কবার্তার জন্য অ্যালামের সাউন্ড রেকর্ড করে রাখা। FDR অর্থাৎ ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার এর কাজ হল বিমানের ২৫ ঘণ্টার যাবতীয় তথ্য উচ্চতাগত তথ্য, স্পিড এবং বিমানের ইঞ্জিন পারফর্মেন্স রেকর্ড করে রাখা।