আজকাল ওয়েবডেস্ক: চোখের সামনে বাবাকে খুন করা হয়েছিল। যে দৃশ্য একদিনের জন্যেও ভোলেননি ছেলে। ভুলে যাননি খুনির চেহারাও। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মুখিয়েও ছিলেন। অবশেষে বাবার খুনের ১৪ বছর পর চরম প্রতিশোধ নিলেন ছেলে। সেই খুনিকে প্রকাশ্যে গুলি করে শেষ করলেন তিনি। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। রবিবার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে মাঙ্গলোরা গ্রামে। ৪৫ বছর বয়সি এক যুবককে গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে এক তরুণের বিরুদ্ধে। খুনের ঘটনাটি পরিকল্পনামাফিক করেছেন ওই তরুণ‌। ১৪ বছর আগে এক যুবক তাঁর বাবাকে খুন করেছিলেন। সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই যুবককে গুলি করে খুন করেন তিনি। 

 

পুলিশ আরও জানিয়েছে, মৃতের নাম, জয়বীর। শনিবার সন্ধ্যায় জমিতে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সেই সময় ৩০ বছরের রাহুল প্রকাশ্যে তাঁকে গুলি করে খুন করেন। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় জয়বীরের। এই ঘটনার পরেই রাহুল পলাতক। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। 

 

জয়বীরের পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মৃতের পরিবারের তরফে জানা গেছে, প্রতিশোধ নিতেই জয়বীরকে রাহুল খুন করেছেন। ১৪ বছর আগে, ২০১১ সালে রাহুলের বাবা ব্রিজপালকে জয়বীর খুন করেন। এরপর ১১ বছর জেল হেফাজতে ছিলেন জয়বীর। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গত তিন বছর ধরে এই গ্রামেই পরিবারের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। জয়বীর ছাড়া পেয়ে কোথায় রয়েছেন, তা জানতে পেরেছিলেন রাহুল। এই ঘটনার পরেই এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। 

 

আরও পড়ুন: আরাম পেতে গিয়েই সর্বনাশ! স্পা-র সময় চুপিচুপি অশ্লীল ভিডিও রেকর্ড, হাজার হাজার টাকা খোয়ালেন বৃদ্ধ

 

প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেই এই রাজ্যে এমন আরও একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। ঠিক দশ বছর আগে ভরা রাস্তায় অপমানিত হয়েছিলেন মা। ছোট্ট বয়সে চোখের সামনে মাকে অপমানিত হতে দেখেছিল ছেলে। মায়ের যন্ত্রণায় সান্ত্বনা দেওয়ার ক্ষমতা তখন ছিল না তার। তবে মনে রেখেছিল ঘটনাটি। সঠিক সময়ে যথাযথ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছিল সে। এক দশক পর অবশেষে চরম প্রতিশোধ নিল সে। 

 

দশ বছর আগে রাস্তার মাঝখানে মাকে মারধর করেছিল একদল লোক। কারণ জানত না ছেলে। তবে ঘটনাটি তার মনে ছিল। মায়ের কান্না, চিৎকার ভুলতে পারেনি বয়স বাড়লেও। ঠিক দশ বছর পর তার প্রতিশোধ নিল। মাকে যে বেধড়ক মারধর করেছিল, তাকে পথে পথে খুঁজেছে দশ বছর ধরে। সন্ধান পেতেই চরম পদক্ষেপ করল তরুণ। 

 

বন্ধুদের সঙ্গে মিলে সেই যুবককে পিটিয়ে খুন করল সে। এরপরই উদযাপনে মেতে ওঠে সে। তবে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া যায়নি। কয়েক মাস পরেই হত্যাকাণ্ডের কিনারা করল পুলিশ। পুলিশের জালে ধরা পড়ল অভিযুক্ত তরুণ ও তার বন্ধুরা। ঘটনাটি সিনেমার কাহিনির থেকে কম কিছু নয়। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত তরুণের নাম সোনু কাশ্যপ। মনোজ নামের ডাব বিক্রেতাকে খুনের ঘটনায় সে মূল অভিযুক্ত। এই হত্যাকাণ্ডে তাকে সাহায্য করেছিল আরও চার বন্ধু। মোট পাঁচজন মিলে নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। সকল ধৃতেরা হল, সোনু, রঞ্জিত, আদিল, সালামু, রেহমাত আলি। 

 

দশ বছর আগে ঠিক কী ঘটেছিল? 

পুলিশ জানিয়েছে, সোনু কাশ্যপ তখন ছোট। ভরা রাস্তায় তার মাকে কয়েকজন লোক বেধড়ক মারধর করেছিল। সোনুর মায়ের সঙ্গে মনোজের বচসা হয়েছিল। সেই ঝামেলার জেরেই সোনুর মাকে মারধর করে মনোজ পালিয়ে গিয়েছিল। মারধরের ঘটনাটি ঘটেছিল সোনুর চোখের সামনে। বয়সে ছোট হলেও, মায়ের অপমান টের পেয়েছিল। ছোট বয়স থেকে মনের মধ্যে ক্ষোভ পুষে রেখেছিল সে। 

 

গত দশ বছর ধরে মনোজের খোঁজে লখনউয়ের পথে পথে ঘুরতে থাকে সোনু। অবশেষে তিন মাস আগে মনোজের দেখা পায়। এরপর টানা তিন মাস মনোজের গতিবিধি লক্ষ করে। সে কখন দোকানে আসে, কখন দোকানে থেকে বের হয়, কোথায় থাকে, কাদের সঙ্গে মেলামেশা, সবটাই খতিয়ে দেখে সোনু। পাশাপাশি খুনের ছক কষতে থাকে। 

 

মনোজকে খুনের জন্য চার বন্ধুকে ডাকে সোনু। তাদের জানায়, নিশ্চুপে এই খুনটি করতে পারলেই, সকলকে নিয়ে পার্টি করবে। দেদার মদ্যপান করাবে। গত ২২ মে মনোজ রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার তোড়জোড় করছিল। সেই সময়েই তার উপর হামলা করে সোনু ও তার বন্ধুরা। লাঠি দিয়ে মারতে মারতে মনোজকে অচৈতন্য করে পালিয়ে যায় তারা। হাসপাতালে পরদিন মনোজের মৃত্যু হয়। 

 

এই ঘটনার তদন্তে নেমে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ। কিন্তু অভিযুক্তদের মুখ স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি। এদিকে মনোজের মৃত্যুর পর পার্টিতে যেতে ওঠে সোনু ও তার বন্ধুরা। সেই পার্টির ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতেও পোস্ট করে তারা। সেই ছবিটি পুলিশের হাতে পৌঁছয়। একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই, বাকিদের খোঁজ পায় পুলিশ। অবশেষে খুনের তিন মাস পর পুলিশি হেফাজতে অভিযুক্ত পাঁচ তরুণ।