আজকাল ওয়েবডেস্ক: নয়ডা কাণ্ডে নাটক থামছেই না। স্ত্রী হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশি হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করেন অভিযুক্ত স্বামী বিপিন। জানা গিয়েছে, পুলিশের রিভলভার কেড়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। সেই সময়ে তাঁকে পায়ে গুলি করে আটক করে পুলিশ। ঘটনাটি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নিহত বধূ নিকির বাবা ভিখারি সিং পৈলা সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘ওরা খুনি, ওদের গুলি করে মারা উচিত, বাড়ি ভেঙে দেওয়া উচিত। আমার মেয়ে নিজের ছেলেকে মানুষ করছিল একটি বিউটি পার্লার চালিয়ে। তাঁকে নির্যাতন করা হত। পুরো পরিবারই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল, আমার মেয়েকে খুন করেছে’। অভিযুক্ত স্বামী বিপিন অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানান, ‘আমার কোনও অনুশোচনা নেই। আমি তাঁকে খুন করিনি। তিনি নিজেই মারা গেছেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়, এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার’। এদিকে নিহত নিকির বাবা তাঁর জামাইকে ‘অসুরের সঙ্গে’ তুলনা করে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁর কথায়, ‘ওর অনুশোচনা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অসুরদের কখনও অনুশোচনা হয় না। কী করেছে সে ভালো করেই জানে। একদিন ঈশ্বরের কাছে জবাব দিতেই হবে’। ঘটনায় এলাকা জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, পণ না দেওয়ায় দিনের পর দিন নির্মম শারীরিক নির্যাতন চলেছে ওই একই বাড়িতে বিয়ে হওয়া দুই বোনের ওপর। দুজনেই বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে চরম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তাও আবার নিজেদের সন্তানদের সামনেই। এর মধ্যে বিপিন তাঁর স্ত্রীকে বেধড়ক মারতে মারতেই গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গিয়েছে, গায়ে আগুন নিয়ে প্রাণপণে চিৎকার করে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যান নিক্কি নামে ওই তরুণী। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। তরুণীর মর্মান্তিক পরিণতি হয় হাসপাতালে। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই শ্বশুরবাড়ির অকথ্য নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ওই তরুণীর দিদি। থানায় অভিযোগ দায়ের করে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কড়া শাস্তির দাবি জানান তিনি। নির্মম শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে। এমনকি, মারতে মারতে তাঁকে সিঁড়ি থেকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় পণের জন্য। তরুণীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন স্বামী। অবশেষে মৃত্যু হয় তরুণীর।

জানা গিয়েছে, নিক্কি ও দিদির উপর চরম শারীরিক নির্যাতন করতেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। পণ হিসেবে দুজনের থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন তাঁরা। নিক্কির দিদি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। মারতে মারতে সন্তানের চোখের সামনেই নিক্কির গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন।‌ বাঁচার জন্য গায়ে আগুন নিয়েই সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিনি শেষরক্ষা হয়নি। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নিক্কির মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ আধিকারিক সুধীর কুমার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতেই হাসপাতাল থেকে থানায় ফোন করে জানানো হয়। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় এই তরুণী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতেই তাঁকে সফদরজং হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। হাসপাতালে যাওয়ার পথেই তরুণীর মৃত্যু হয়। তাঁর দিদির অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই নিক্কির স্বামী বিপিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিক্কির শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেওরের খোঁজেও তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।