আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংস্কৃতি, রীতি ও ঐতিহ্যে ভারতের সুনাম ছড়িয়ে বিশ্বজুড়ে। সমস্ত ধর্ম, জাত নির্বিশেষে ঐতিহ্যের ছাপ এখনও রয়েছে বিবাহের রীতি, রেওয়াজে। নাচ, গান, সাজসজ্জায় চমক, নানা রীতিতে ঠাসা থাকে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলি। যা প্রায়ই সকলের নজর কেড়ে। সম্প্রতি ভারতীয় বিবাহের এক প্রাচীন রীতি ঘিরে জোর চর্চা চলছে সমাজমাধ্যমের পাতায়। 

 

রীতির নাম, হট্টি পলিয়ান্দ্রি। হিমাচল প্রদেশের এক রীতি অনুযায়ী, এক পাত্রীকে দুই ভাই বিয়ের করেন। যা ঘিরে সাধারণ বিয়ের মতোই উদযাপনে মেতে ওঠে গোটা পরিবার। এমনকী স্ত্রীকে নিয়েও দুই ভাইয়ের মধ্যে কোনও ঝগড়া, অশান্তি হয় না। দুই স্বামীর সঙ্গে মিলেই সংসার করেন কনে। 

 

তবে কয়েক দশকে এই রীতি অনেকেই পালন করেন না। বিশেষত বিয়ে ও সংসার সংক্রান্ত নানা ঝামেলার কারণে প্রাচীন এই রীতি প্রায় মুছে যাওয়ার পথেই ছিল। সম্প্রতি হিমাচলের বাসিন্দা দুই ভাই সেই প্রাচীন রীতি মেনে বিয়ে করায়, আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। রীতিটি যাতে সম্প্রদায় থেকে মুছে না যায়, তার জন্যেই এক তরুণীকে দু'জনে বিয়ে আবারও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রদীপ নেগি ও কপিল নেগি দু'জনেই হিমাচল প্রদেশের সিরমুর জেলার বাসিন্দা। অন্যদিকে পাত্রী সুনিতা চৌহান কুনহাট এলাকার বাসিন্দা। দুই পাত্র ও এক পাত্রী, তিনজনেই হট্টি সম্প্রদায়ের বাসিন্দা। নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই বিয়ের চল রয়েছে। পলিয়ান্দ্রি রীতি মেনে তাঁরা বিয়ে করেন। সুনিতা একসঙ্গে প্রদীপ ও কপিলের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। 

 

আরও পড়ুন: 'কলেজে ঢুকলেই...', শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ জানিয়ে আরও এক কলেজ ছাত্রীর মর্মান্তিক পরিণতি

 

হিমাচল প্রদেশের হট্টি সম্প্রদায়ের এই পলিয়ান্দ্রি বিয়ের রীতি দ্রৌপদী প্রথা নামেও পরিচিত। হিমাচলের সিরমুর ছাড়াও, উত্তরাখণ্ডের কয়েকটি এলাকায় এই রীতি মেনে বিয়ের চল রয়েছে। একাধিক ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কনে। পৈতৃক ভিটে যাতে ভাগাভাগি না হয়, কোনও স্ত্রী যাতে এক ভাইয়ের মৃত্যুর পর বিধবা না হন, তার জন্যেই একাধিক ভাইয়ের সঙ্গে একজনের বিয়ে দেওয়া হয়। এতে পরিবারে সুখ, শান্তিও বজায় থাকে। 

 

জানা গেছে, প্রদীপ জল শক্তি দপ্তরের কর্মী। কপিল বিদেশে হসপিটালিটি ইন্ড্রাস্ট্রিতে কর্মরত। দু'জনে দুই দেশে থাকলেও, সম্প্রদায়ের প্রাচীন রীতি মেনে বিয়েতে রাজি হন। সুনিতার সঙ্গে আলাপ পরিচয়ের পর তাঁদের পছন্দ হন। দু'জনেই সুনিতাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন দ্রুত। সুনিতা জানিয়েছেন, 'আমাকে কেউ বিয়ের জন্য জোরাজুরি করেননি। দ্রৌপদী প্রথার বিয়ের রীতি আমি আগে থেকেই জানতাম। সব রীতি, রেওয়াজ জেনেই এই বিয়েতে আমি সম্মতি জানিয়েছিলাম।' দুই ভাই জানিয়েছেন, 'আমার আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে সবসময় গর্ববোধ করি। পারস্পরিক আলোচনার পরেই তিনজনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের পরিবারের বন্ধন যাতে আজীবন অটুট থাকে, তাই দ্রৌপদী প্রথায় বিয়েতে রাজি হয়ে যাই।' 

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনদিন ধরে চলে এই বিয়ের অনুষ্ঠান। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং গ্রামের বাসিন্দারা এই বিয়েতে নিমন্ত্রিত ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী ট্রান্স-গিরি খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। পাহাড়ি গানে মেতেছিল গোটা বিয়েবাড়ি। ঐতিহ্যবাহী রীতিগুলিও ছিল নজরকাড়া। দিনভর নাচগান, হুল্লোড়ে মেতেছিলেন সকলে। আনন্দে মেতেছিলেন নবদম্পতিও।