নিতাই দে, আগরতলা: স্কুলে শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়ে বড় ঘোষণা করল ত্রিপুরা সরকার। মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর ঘোষণা করা হল, এক হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে শীঘ্রই। পাশাপাশি আরও একাধিক দপ্তরে হাজার হাজার কর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু হতে চলেছে। সবমিলিয়ে তিন হাজারের বেশি কর্মী নিয়োগ করা হবে। 

ত্রিপুরা রাজ্য সরকার বিভিন্ন দপ্তরে ৩ হাজার ২৭৩ জন লোক নিয়োগ করবে। রাজ্যের মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত‌ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধীনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পদে মোট ১ হাজার ৬১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। 

মঙ্গলবার সচিবালয়ের আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটন ও পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী রাজ্য মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহের কথা বলতে গিয়ে পর্যটনমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধীনে স্নাতকোত্তর শিক্ষক পদে ৯১৫ জন নিয়োগ করা হবে। টিআরবিটি-এর মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এক্ষেত্রে যাঁরা স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন এবং বিএড রয়েছে, তাঁরাই এই পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তাছাড়া এই দপ্তরের অধীনেই স্নাতক স্তরের ৭০০ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। 

আরও পড়ুন: সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভেঙে ফেলছে ইউনূস সরকার! উদ্বিগ্ন মমতা, কী জানাল কেন্দ্র?

পর্যটন মন্ত্রী আরও বলেন, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধীন রাজ্যের ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটিতে ৩৭টি বিভিন্ন পদে নিয়োগ করা হবে বলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এইক্ষেত্রে ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি স্ব-উদ্যোগে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। তিনি জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অধীনে ৬ জন ডেন্টাল মেডিক্যাল অফিসার টিপিএসসি'র মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। 

প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে ত্রিপুরা রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধীনে বিভিন্ন স্কুলের জন্য ১,৫৬৬টি অস্নাতক ও স্নাতক শিক্ষকের পদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১,০৯৯টি অস্নাতক শিক্ষক পদ এবং ৪৬৭টি স্নাতক শিক্ষক পদ। সচিবালয়ের এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে রাজ্যের খাদ্য, পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এ ঘোষণা করেছিলেন। 

মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিয়োগ সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই অস্নাতক ও স্নাতক শিক্ষকের পদগুলি তৈরি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া টিআরবিটি'র মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। তাছাড়াও  মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাজ্যের ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি বিদ্যালয়ের জন্য ১১২ জন স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফিক্সড-পে ভিত্তিতে তাঁদের নিয়োগ করা হবে। 

সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটনমন্ত্রী আরও জানান, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরে ১৯৮ জন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (ডিগ্রি-১০৫ ও ডিপ্লোমা-৯৩) নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। টিপিএসসি'র মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। 

গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন পদে ৩১৫ জন লোক নিয়োগ করার ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানিয়েছিলেন রাজ্যের পর্যটন উন্নয়ন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। অর্থ দপ্তরের অধীনে ১৪০টি অডিটর (গ্রুপ–সি) পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এই সংবাদ জানান। এই ১৪০টি অডিটর পদ অর্থ দপ্তর পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ করবে। এর জন্য দপ্তরের অধীনে একটি বোর্ড গঠন করা হবে। মন্ত্রী আরও জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বন দপ্তরের অধীনে ১০৪টি ফরেস্টার (গ্রুপ–সি) পদে নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বন দপ্তরও পরীক্ষার মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। তাছাড়াও সমবায় দপ্তরে ৩০টি বিভিন্ন পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদগুলির মধ্যে রয়েছে অডিটর (সমবায়), ইনভেস্টিগেটর (সমবায়), স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনভেস্টিগেটর ইত্যাদি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরে ৩৪টি আইসিডিএস সুপারভাইজার (গ্রুপ–সি) পদে নিয়োগেরও। ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। পর্যটন দপ্তরে পদোন্নতির ভিত্তিতে ২ জন আপার ডিভিশন ক্লার্ক এবং ৩টি গ্রুপ–ডি পদে নিয়োগ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনে ২টি বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনীয়ার (গ্রুপ–এ) পদে লোক নিয়োগ করা  হবে। এই দুটি বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার টিপিএসসি’‌র মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে বলে জানান পর্যটন মন্ত্রী।