আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রবীণ রাজনীতিক, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (Jharkhand Mukti Morcha - JMM) প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক শিবু সোরেন প্রয়াত হয়েছেন। সোমবার রাতে দিল্লির একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। বর্তমানে রাজ্যসভার সদস্য পদে ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলে ও বর্তমান ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন নিজেই তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেন। টুইটারে এক আবেগঘন বার্তায় হেমন্ত লেখেন, “সম্মানীয় দিশোম গুরু আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আজ আমি একেবারে শূন্য হয়ে গেলাম।”
'দিশোম গুরু' বা ‘মহান নেতা’ নামে পরিচিত শিবু সোরেন ছিলেন ভারতের আদিবাসী রাজনীতির এক অগ্রগণ্য মুখ। তিনি তিনবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন একাধিকবার।
শিকড় থেকে নেতৃত্বের শিখরে
১৯৪৪ সালের ১১ জানুয়ারি বর্তমান ঝাড়খণ্ডের নেমরা গ্রামে সাঁওতাল আদিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শিবু সোরেন। শৈশবে তাঁর পিতা স্থানীয় জমিদারদের হাতে নিহত হন, যা তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর লড়াই—ভূমির অধিকার ও আদিবাসী সুরক্ষার দাবিতে। রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন গ্রামীণ আন্দোলনের মাধ্যমে। তিনি আদিবাসীদের জমির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত করেন কৃষক-শ্রমিকদের। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, যা ১৯৭০-এর দশকে ঝাড়খণ্ডকে আলাদা রাজ্য গঠনের দাবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা
শিবু সোরেন ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ছয়বার লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হন। পাশাপাশি, রাজ্যসভাতেও তিনবার নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে তিন দফায় কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তিনি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনবার—মার্চ ২০০৫ (মাত্র ৯ দিনের জন্য), আগস্ট ২০০৮ থেকে জানুয়ারি ২০০৯, এবং ডিসেম্বর ২০০৯ থেকে মে ২০১০। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কোনওবারই পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। ১৯৮৭ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে JMM-এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ওই পদে বহাল থাকেন। প্রায় চার দশক ধরে তিনি ছিলেন দলের প্রধান চালিকাশক্তি ও আদিবাসী রাজনীতির মুখ।
আরও পড়ুন: মেয়েদের জন্য বড় সুযোগ, প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা দেবে LIC ‘বিমা সখী’ প্রকল্পে
জনসমর্থন ও বিতর্ক
যদিও শিবু সোরেন আদিবাসী জনগণের কাছে 'দিশোম গুরু' নামে জনপ্রিয় ছিলেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবন বিতর্ক থেকেও মুক্ত ছিল না। ২০০৬ সালে একটি হত্যা মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও পরে আদালতের নির্দেশে সেই রায় বাতিল হয়।
শূন্যতা ও উত্তরাধিকার
তাঁর মৃত্যুতে ঝাড়খণ্ড তথা ভারতীয় রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবসান ঘটলো। পুত্র হেমন্ত সোরেন, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, শোক জানিয়ে বলেন, “সম্মানীয় দিশোম গুরু আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আজ আমি একেবারে শূন্য হয়ে গেলাম।” শিবু সোরেন শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং একজন প্রতীক, যিনি আদিবাসী চেতনা, ভূমি আন্দোলন ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামের অন্যতম কণ্ঠস্বর ছিলেন। তাঁর লড়াই, সংগ্রাম ও উত্তরাধিকার আগামী দিনেও ঝাড়খণ্ড ও ভারতীয় রাজনীতিতে পথ দেখাবে।
