আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজ্ঞানের হাত ধরে অগ্রগতির পথেই হাঁটছে সমাজ। অথচ অন্ধবিশ্বাস যেন এখনও পিছু ছাড়ছে না। এই অন্ধবিশ্বাসের জেরেই চরম নির্যাতন হাসিমুখেই মেনে নিচ্ছেন অনেকে। এমন অনেক কার্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, যা ঘিরে নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছেন। তবুও থামার লক্ষণ নেই।
সম্প্রতি স্বঘোষিত এক 'বাবা'র কীর্তি ফাঁস হয়েছে। সন্তান থাকে অবিবাহিতদের বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চরম নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চরম নির্যাতন করেন তিনি। কখনও লাঠি দিয়ে মারতে মারতে অজ্ঞান করে দেন। কখনও বা নিজের মূত্রপান করতেও জোরাজুরি করেন।
'বাবা'র এমন নির্দেশ অনেকেই আবার পালন করেছেন। অন্ধবিশ্বাসের জেরেই। তাঁদের ধারণা, ওই 'বাবা'র মূত্রপান করলেই সন্তানের জন্ম হবে। আত্মা শুদ্ধ হবে। এমনকী অবিবাহিতরাও মনের মানুষের সঙ্গে শীঘ্রই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন। 'বাবা'কে নিয়ে যদিও তাঁরা কোনও অভিযোগ করেননি। কিন্তু বিষয়টি ফাঁস হতেই সমাজকর্মীই রুখে দাঁড়িয়েছেন।
আরও পড়ুন:
খুন না গণ আত্মহত্যা? বন্ধ ঘর থেকে গোটা পরিবারের নিথর দেহ উদ্ধার, বুরারিকাণ্ডের ছায়া গুজরাটে
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। পুলিশ জানিয়েছে, ছত্রপতি শিম্বাজীনগর জেলার ভৈজাপুর তালুকের সৈউর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। সম্প্রতি কয়েকজন সমাজকর্মী সঞ্জয় পাগাড়ে নামের এক স্বঘোষিত 'বাবা'র বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করা হয়েছে। যেখানে সঞ্জয় পাগাড়ে নামের ওই 'বাবা'র একাধিক কীর্তি ফাঁস হয়েছে। যা দেখে শিউরে উঠেছে খোদ পুলিশ।
জানা গেছে, সন্তানের জন্ম থেকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই 'বাবা' দিনের পর দিন নির্যাতন করছেন গ্রামবাসীদের। ওই গ্রামের একটি মন্দিরে গত দুই বছর ধরে তিনি থাকেন। গ্রামবাসীদের অন্ধবিশ্বাস, 'বাবা' সঞ্জয় পাগাড়ে ঈশ্বরের আরেক রূপ। তাই তাঁর নির্যাতনগুলিও হাসিমুখেই সকলে মেনে নেন। কারও গলায় পা চেপে ধরেন, কাউকে মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলেন, নারী, পুরুষ ভক্তদের নিজের মূত্র পান করান। কখনও নিজেদের জুতো, চটি চিবিয়ে খেতে বলেন, কখনও নিজের জুতো চেটে পরিস্কার করার নির্দেশ দেন। এমনকী গাছের পাতা চিবিয়ে খাওয়ার নিদান দেন তিনি।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এক যুবককে বেধড়ক মারধর করছেন সঞ্জয়। মারতে মারতে মন্দির থেকে মাটিতে ফেলে দেন। তারপরেও শক্ত লাঠি দিয়ে মারতে থাকেন। প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় যুবককে টেনে হিঁচড়ে মন্দিরের ভিতরে নিয়ে যান। এরপর যজ্ঞ করের সামনে তাঁকে বসিয়ে দেন। তাঁর মুখের মধ্যে হলুদ গুঁড়ো ছড়িয়ে দেন। তারপর জুতোর গন্ধ শুঁকতে বলেন। এরপর ড্রাম বাজাতে শুরু করেন 'বাবা'। অত্যাচারের পর উঠে দাঁড়াতেও পারছিলেন না যুবক। তাঁকে বাকিরা ধরাধরি করে বাড়িতে পৌঁছে দেন।
আরও একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আত্মার শুদ্ধিকরণের জন্য তাঁর সামনে জড়ো হয়েছেন বহু গ্রামবাসী। তাঁদের শক্ত লাঠি দিয়ে তুমুল পেটাচ্ছেন তিনি। সেখানে একাধিক মহিলা উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের মূত্র খাইয়ে দিতেও দেখা গেছে তাঁকে।
সমাজকর্মীরা জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের অন্ধবিশ্বাসের জেরেই 'বাবা' সঞ্জয় পাগাড়ের এত রমরমা গ্রামে। তাঁর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফ আই আর দায়ের করেছেন সমাজকর্মীরা। নির্যাতন, হেনস্থা, প্রতারণা এবং অন্ধবিশ্বাস ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে। ঘটনাটি ঘিরে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত জারি রয়েছে।
