আজকাল ওয়েবডেস্ক: সবুজ পাহাড়ে ঘেরা উত্তর ভারতের রাজ্যে হিমাচল প্রদেশ। বছরভর যেখানে লক্ষ লক্ষ পর্যটক ভিড় জমান। সেই হিমাচল প্রদেশ চলতি বছরে প্রবল বৃষ্টির জেরে 'মৃত্যু উপত্যকা'য় পরিণত হয়েছে। তছনছ হয়ে গেছে একাধিক অঞ্চল। কোথাও ধস, কোথাও হড়পা বান, কোথাও আবার মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। এর জেরে আরও বাড়ল মৃত্যুমিছিল।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০ জুন মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ৩০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে হিমাচল প্রদেশ জুড়ে। যাদের মধ্যে বৃষ্টিজনিত কারণে ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভূমিধস, হড়পা বান, মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, বজ্রাঘাতে, জলে তলিয়ে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনাগুলি ঘটেছে। ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে পথ দুর্ঘটনায়।
রবিবার রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর আরও জানিয়েছে, প্রবল বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে ১২টি জেলাতেই ধ্বংসলীলা চলেছে। ফসল, জমির ক্ষতির পাশাপাশি, সরকারি সম্পত্তিও নষ্ট হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে ভূমিধসের জেরে, হড়পা বানে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। মেঘ ভাঙা বৃষ্টির ১৭ জনের, বন্যার জলে তলিয়ে ৩২ জনের, আগুনে ঝলসে ১৩ জনের, সাপের কামড়ে ১৩ জনের, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু।
বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর সূত্রে খবর, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্ডি ও কাঙ্গরা জেলা। এই দুই রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। দুই রাজ্যে ২৯ জন করে প্রাণ হারিয়েছেন। পাশাপাশি চাম্বা ও কুলুতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চাম্বায় ১৪ জন এবং কুলুতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে ২ হাজার ৩৪৮.৬২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পিডব্লিউডি-র অধীনে এক হাজার ৩১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, ওয়াটার সাপ্লাইয়ের অধীনে ৭৬৯.৭৪ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ দপ্তরের অধীনে ১৩৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চাষের জমি ও ফসল মিলিয়ে ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রশাসনের তরফে আরও জানা গেছে, হিমাচল প্রদেশ জুড়ে ১ হাজার ৮৩৩টি বড় পশু এবং ২৫ হাজার ৭৫৫ পোল্ট্রি পাখি মারা গেছে। ৩১৭টি বাড়ি পুরোপুরি ধসে পড়েছে। ৩৬৭টি বাড়ি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৬৫টি দোকান পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখে, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ শীঘ্রই শুরু করবে সরকার। ইতিমধ্যেই দুর্গতদের নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আগস্টের শেষ সপ্তাহেও হিমাচল প্রদেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে। মৌসম ভবন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার হিমাচল প্রদেশের সব জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জারি রয়েছে হলুদ সর্তকতা। আজ বিলাসপুর, সোলান, হামিরপুরে সমস্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধ রয়েছে। দুটি জাতীয় সড়ক সহ মোট ৪৮৪ টি সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র মান্ডি জেলায় ২৪৫টি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। কুলুতে বন্ধ ১০২টি রাস্তা।
