আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভায় Health Security Se National Security Cess Bill, 2025 নিয়ে আলোচনায় নামকরণ থেকে আর্থিক কাঠামো—সবকিছু নিয়েই তীব্র বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী দলের সাংসদরা অভিযোগ করেন যে বিলের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে “হিংলিশ” ব্যবহার করে আইন প্রণয়নের নিরপেক্ষতা ও ভাষাগত সমতা নষ্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁরা দাবি করেন—বিল ফেডারেল অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং রাজ্যগুলিকে তাদের ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত করবে।

বিলের উদ্দেশ্য অনুসারে, পান মশলা উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র বা উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর বিশেষ সেস আরোপ করা হবে এবং সেই অর্থ জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় নিরাপত্তা—এই দু’টি খাতে বরাদ্দ হবে। ঠিক এখানেই আপত্তি জানিয়ে ডিএমকে সাংসদ টি. সুমথি প্রশ্ন তোলেন—একই সেসের আওতায় দুটি সম্পূর্ণ পৃথক খাতকে কেন জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “কেন এই ভাষাগত মিশ্রণ? একটি আইন সর্বজনীন হওয়া উচিত, কোনও  নির্দিষ্ট ভাষা বা সংস্কৃতির প্রাধান্য দেওয়ার জন্য নয়।” তাঁর দাবি—‘se’ শব্দটি বাদ দিয়ে নামটি ভাষাগতভাবে নিরপেক্ষ করা উচিত।

তৃণমূল  সাংসদ সৌগত রায় আরও কড়া ভাষায় মন্তব্য করেন—“এটি আইন নয়, এটি হিংলিশ। না ঠিকমতো ইংরেজি, না ঠিকমতো হিন্দি—আইনের নাম এমন হতে পারে না।” তিনি আরও অভিযোগ করেন— অর্থমন্ত্রী নিজেকে “হিন্দি-করন” করার চেষ্টা করছেন এবং হিন্দিতে বক্তব্য দেওয়ায় বাংলা ভাষাভাষী সংসদ সদস্যদের বক্তব্য বোঝা কঠিন হয়েছে। উত্তরে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন স্পষ্টভাবে জানান—তিনি যে কোনও ভাষায় বক্তব্য রাখতে পারেন এবং সংসদে অনুবাদের ব্যবস্থা রয়েছে। তাঁর বক্তব্য—“আপনি বিল না পড়ে থাকলে সেটা আমার দায়িত্ব নয়।”

বিরোধীদের দ্বিতীয় বড় আপত্তি—এই সেস divisible pool–এর বাইরে চলে যাবে, ফলে রাজ্যগুলি তাদের বৈধ অংশ থেকে বঞ্চিত হবে। কংগ্রেস সাংসদ প্রভা মল্লিকার্জুন বলেন—“স্বাস্থ্য পরিষেবা বহন করে রাজ্য সরকার, অথচ এই বিল রাজ্যকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ও জাতীয় নিরাপত্তা দুটি ভিন্ন খাতে একই সেস বরাদ্দ করলে অডিট, স্বচ্ছতা ও ব্যয় বিশ্লেষণ কঠিন হবে।”

এনসিপি (এসপি) নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে বলেন—“ক্ষতিকর পণ্যে কর আরোপে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সেস আকারে আনলে ভবিষ্যতে সংসদে ফের বিল না এনে সরকার তা বাড়াতে পারবে। তাহলে গণতান্ত্রিক জবাবদিহি কোথায়?” তিনি দাবি করেন—এটি কর হিসাবে আনা উচিত যাতে রাজ্যগুলিও অংশ পায়।

এদিকে সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য বিরেন্দ্র সিংহ বলেন—পান মশলা ও তামাকের কারণে মুখে ক্যানসারের প্রকোপ ভয়াবহভাবে বাড়ছে, বিশেষ করে গ্রামীণ ও দরিদ্র এলাকায়। তাঁর বক্তব্য—“প্রতি বছর শুধু পূর্ব উত্তর প্রদেশেই প্রায় দুই লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হন। যদি এই সেস জনস্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় হয় তবে তা অবশ্যই স্বাগত।”

বিতর্কের মাঝে সৌগত রায় আরও অভিযোগ করেন—যেদিন ভারতীয় মুদ্রার মান ইতিহাসে প্রথমবার ১ ডলার = ₹৯০ ছুঁল, সেই দিন অর্থমন্ত্রী অর্থনীতি নিয়ে কোনও বিবৃতি দেননি। তিনি বলেন—“দিল্লি আজ ভয়াবহ দূষণে পর্যুদস্ত, অথচ স্বাস্থ্য নিরাপত্তার নামে এমন বিল আনা হচ্ছে, যার মধ্যে বাস্তব সমস্যা সমাধানের রূপরেখা নেই।”

অর্থমন্ত্রী সীতারামন বলেন—সরকার মনে করে সেস আরোপে পান মশলার ব্যবহার কমবে এবং সংগৃহীত অর্থ দুই ক্ষেত্রেই—বিশেষত জাতীয় নিরাপত্তায়—দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা হবে। তিনি দাবি করেন—সেসের রাজস্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ করা হবে, যদিও বিরোধীরা বলেন—বিলে সেই বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই।

সমগ্র আলোচনায় স্পষ্ট—এই বিলকে কেন্দ্র করে বিরোধিতা শুধুই আর্থিক কাঠামো বা স্বাস্থ্যনীতি নয়, ভাষা রাজনীতি, কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্ক এবং সাংবিধানিক ভারসাম্যকেও সামনে এনেছে। বিতর্ক শেষে বিলটি আরও আলোচনার জন্য স্থগিত রাখা হয়।