আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের দিকে জুতো ছোঁড়ার চেষ্টার ঘটনায় অনুতপ্ত নন অভিযুক্ত আইনজীবী রাকেশ কিশোর। মঙ্গলবার এএনআই-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রাকেশ বলেন যে খাজুরাহোর জাভারি মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর কাঠামো পুনরুদ্ধারের আবেদন খারিজ করার সময় প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে তিনি গভীর ভাবে দুঃখিত।
তিনি বলেন, “১৬ সেপ্টেম্বর একটি জনস্বার্থ মামলায় ভগবানের মজা উড়িয়ে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ভগবানকে প্রার্থনা করে বলুন নিজের মূর্তি নিজেকেই ঠিক করে নিতে। আমি এই রায়ে মর্মাহত হয়েছি।”
তিনি দাবি করেছেন যে, যখন মামলাগুলি অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে তখন বিচারবিভাগ ভিন্নভাবে কাজ করে। তিনি বলেন, “আমরা দেখতে পাই যে যখন অন্যান্য ধর্মের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, যেমন হলদোয়ানিতে রেলের জমি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের দখলে ছিল। যখন সেই সম্প্রদায়কে অপসারণের চেষ্টা করা হয়েছিল, তখন সুপ্রিম কোর্ট তিন বছর আগে এটির উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। নূপুর শর্মার মামলায় আদালত বলেছিল, ‘আপনি পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছেন’। যখন সনাতন ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলি থাকে, তা জাল্লিকাটু হোক বা দহি হান্ডির উচ্চতা, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ আমাকে আঘাত করেছে।”
আরও পড়ুন: প্রধান বিচারপতিকে জুতো ছোঁড়ার চেষ্টার নিন্দা মোদির, ‘প্রত্যেক ভারতীয় ক্ষুব্ধ’, বললেন প্রধানমন্ত্রী
কিশোর আরও বলেন, আদালত যদি স্বস্তি দিতে নাও পারে, অন্তত উপহাস করা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, “আবেদনটি খারিজ করে দেওয়াটা অন্যায় ছিল। তবে, আমি হিংসার বিরুদ্ধে, কিন্তু আপনার ভাবা উচিত কেন একজন সাধারণ মানুষ, যিনি কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত নন, তিনি এমন পদক্ষেপ নিলেন। এমন নয় যে আমি কোনও মাদকের প্রভাবে ছিলাম; এটা ছিল তাঁর কাজের প্রতি আমার প্রতিক্রিয়া। আমি ভীত নই এবং আমার কোনও অনুশোচনাও নেই... আমি কিছুই করিনি, ঈশ্বর আমাকে এটা করতে বাধ্য করেছেন।”
দেশের শীর্ষ বিচারপতিকে নিশানা করে আক্রমণের সমালোচনার জবাবে কিশোর বলেন, “প্রধান বিচারপতির ভাবা উচিত যে তিনি যখন এত উচ্চ সাংবিধানিক পদে বসে আছেন, তখন তাঁর ‘মিলর্ড’ শব্দের অর্থ বোঝা উচিত এবং এর মর্যাদা রাখা উচিত... আপনি মরিশাসে যান এবং বলেন যে দেশ বুলডোজার দিয়ে চলবে না। আমি প্রধান বিচারপতি এবং আমার কাজের যাঁরা বিরোধিতা করছেন তাঁদের জিজ্ঞাসা করি: যারা সরকারি সম্পত্তি দখল করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যোগীজির বুলডোজার ব্যবস্থা কি ভুল?... আমি আহত এবং তাই হতে থাকব...”
#WATCH | Delhi: Suspended Advocate Rakesh Kishore, who attempted to hurl an object at CJI BR Gavai, says, "...I was hurt...I was not inebriated, this was my reaction to his action...I am not fearful. I don't regret what happened."
— ANI (@ANI)
"A PIL was filed in the Court of CJI on 16th… pic.twitter.com/6h4S47NxMdTweet by @ANI
ভারতের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইকে জুতে ছুড়ে মারার চেষ্টার ঘটনার নিন্দা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টে জানিয়েছেন মোদি। সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন, “এই ঘটনায় প্রত্যেক ভারতীয় ক্ষুব্ধ”। ঘটনার সময় প্রধান বিচারপতির ভূমিকার প্রশংসাও করেছেন মোদি।
সোমবারের ঘটনার নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ‘‘এটি অত্যন্ত জঘন্য কাজ। কার্যত ভারতের সংবিধানের উপর হামলা।’’ ঘটনার নিন্দা করে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্টে ভারতের মাননীয় প্রধান বিচারপতির উপর আক্রমণের নিন্দা করার জন্য কোনও শব্দই যথেষ্ট নয়। এটি কেবল তাঁর উপরই নয়, আমাদের সংবিধানের উপরও আক্রমণ। প্রধান বিচারপতি গাভাই অত্যন্ত দয়ালু, তবে দেশকে গভীর বেদনা ও ক্ষোভের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর পাশে দাঁড়াতে হবে।”
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এই আক্রমণকে ‘আমাদের বিচার বিভাগের মর্যাদা এবং আমাদের সংবিধানের চেতনার উপর আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
প্রবীণ আইনজীবী এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল বলেছেন যে এই হামলার ‘জনসমক্ষে নিন্দা করা উচিত’।
