আজকাল ওয়েবডেস্ক: ধর্মস্থলে "গণ-কবর" মামলায় অপ্রত্যাশিত মোড়, কর্ণাটকের একটি গ্রামে গণ-ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে নিজেকে হুইসেলব্লোয়ার দাবি করা অভিযোগকারীকেই গ্রেপ্তার করল পুলিশ। এই প্রথম সামনে এসেছে অভিযোগকারীর নাম। পুলিশ জানিয়েছে অভিযোগকারী প্রাক্তন সাফাইকর্মী সিএন চিন্নায়া ওরফে চেন্না। পুলিশের দাবি, মিথ্যা বলায় সিএন চিন্নায়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভিযোগকারী ও এই মামলায় প্রধান সাক্ষদাতা সিএন চিন্নায়া-কে আগে 'মুখোশধারী' হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছিল। কারণ তিনি কর্ণাটকে ধর্মস্থানে 'গণ-কবর' মামলায় সাক্ষী হিসাবে সুরক্ষা চেয়েছিলেন।

তদন্তের সময়, সিএন চিন্নায়া ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিজের বক্তব্য রেকর্ড করেছিলেন, কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট ছিল না বিশেষ তদন্তকারী দলের   (এসআইটি) গোয়েন্দারা। তাঁরা ফের চিন্নায়া-কে জেরা করে। এতেই অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এসআইটি জানতে পারে যে, অভিযোগকারী প্রাক্তন ওই সাফাইকর্মী মিথ্যা কথা বলেছিলেন। গোয়েন্দারা চিন্নায়া-কে সাক্ষীর সুরক্ষা বাতিল করে এবং মিথ্যা বলার জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।

আজ সকালে প্রকাশিত ভিডিও-তে দেখা যায়, চেন্নায়া-কে আদালতে হাজির করার আগে মেডিকেল চেকআপের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়। এই মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি ঘটনাতেও নয়া মোড়। সুজাতা ভাট নামে একজন মহিলা দাবি করেছিলেন যে, তাঁর মেয়ে এমবিবিএস ছাত্রী অনন্যা ভাট নিখোঁজ ছিলেন। ওই ধর্মস্থলে সে নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। স্থানীয় ইউটিউব চ্যানেলে সুজাতা বলেছিলেন যে, অনন্যার কখনও কোনও অস্তিত্ব ছিল না! তিনি দাবি করেছেন যে, তাঁকে এই ধরনের মিথ্যা বক্তব্য দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।

গত জুলাইয়ে ঘটনার সূত্রপাত। প্রাক্তন সাফাইকর্মী সিএন চিন্নায়া ওরফে চেন্না একটি খুলি নিয়ে থানায় হাজির হয়েছিলেন। দাবি করেছিলেন, তিনি শতাধিক দেহ গ্রামে মাটিচাপা দিতে সাহায্য করেছিলেন। মৃতদের মধ্যে ধর্ষিতা তরুণীও ছিলেন। তিনি বলেন, তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। অপরাধবোধ থেকেই তিনি পুলিশকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। এই ঘটনায় মন্দিরের নাম জড়িয়ে পড়ে, অভিযোগ ওঠে যে, মন্দিরের নির্দেশেই ওখানে মাটি চাপা দিয়ে দেহ লোপাট করা হত। মন্দিরের প্রধান সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানান সংবাদমাধ্যমকে।

এই ঘটনার জেরে প্রবল রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়। বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেস সরকার ইচ্ছে করে ধর্মস্থলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছে। বিজেপি দাবি করে, এই ঘটনার মাধ্যমে রাজনৈতিক লাভ তুলতে চাইছে শাসকদল।

এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কর্ণাটকের বিজেপির সভাপতি বিওয়াই বিজয়েন্দ্র এই ঘটনাকে "বড় ষড়যন্ত্র" বলে অভিযোগ করেন। বলেন পুরোটাই "হিন্দুত্ববিরোধী"। তিনি বলেন, "এটি একটি বিশাল ষড়যন্ত্র ছিল। এই ষড়যন্ত্র এবং এর পিছনে যারা আছে তাঁদের প্রকাশ করা দরকার। আজ, এটি ধর্মস্থল; আগামীকাল, এটি আরেকটি মন্দির হবে। পুরো এজেন্ডা হিন্দুত্ববিরোধী। এটার নেপথ্যে বামপন্থী এবং কমিউনিস্টদের হাত আছে।"

বিজেপি বিধায়ক ভরত শেঠি দাবি করেছেন যে "মুখোশধারী" এবং সুজাতা ভাট অন্য কারোর নির্দেশে এইসব করেছেন। স্থানীয় পুলিশ অভিযোগকারীর নারকো-বিশ্লেষণের দাবি করার পরপরই তিনি এসআইটি গঠন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ধর্মস্থলে মৃতদেহ পাওয়া যাওয়ার মতো মিথ্যা দাবির পিছনে তিনি প্রচুর আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ করেছেন। 

উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার বলেছেন, "ধর্মস্থল পরিবার নিজেরাই মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন যে তদন্ত ভালভাবে এগোচ্ছে। সরকার কারও পক্ষ নেয় না, শুধু চাই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি না হোক।"