আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গুজরাটে আয়োজিত ‘ঐক্য যাত্রা’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু নাকি বাবরি মসজিদ নির্মাণে সরকারি অর্থ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন সর্দার প্যাটেল।

রাজনাথ সিং বলেন, “পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু বাবরি মসজিদ নির্মাণে সরকারি অর্থ ব্যয় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যদি কেউ সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে থাকেন, তবে তিনি ছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। তিনি কখনও তা হতে দেননি।”

তিনি আরও দাবি করেন, নেহরু যখন গুজরাটের সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের বিষয় উত্থাপন করেন, তখন প্যাটেল স্পষ্ট করে জানান যে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ ওই মন্দির সংস্কারের জন্য যে ত্রিশ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হয়েছিল, তা জনগণের অনুদানে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

রক্ষামন্ত্রী বলেন, “সোমনাথ মন্দির পুনর্গঠনের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল এবং সেখানে সরকারি কোষাগার থেকে এক টাকাও খরচ হয়নি। একইভাবে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণেও সরকারের কোনও টাকা ব্যয় হয়নি। সম্পূর্ণ অর্থ এসেছে জনগণের কাছ থেকে। এটাকেই প্রকৃত অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা বলা হয়।”

এর পাশাপাশি রাজনাথ সিং ১৯৪৬ সালে কংগ্রেস সভাপতিত্ব নির্বাচনের প্রসঙ্গও তোলেন। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেসের অধিকাংশ প্রাদেশিক কমিটি সর্দার প্যাটেলের নাম প্রস্তাব করলেও মহাত্মা গান্ধীর অনুরোধে তিনি নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন এবং তাতে নেহরু সভাপতি নির্বাচিত হন।

তিনি অভিযোগ করেন, দেশের রাজনীতিতে কিছু শক্তি প্যাটেলের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও মর্যাদা মুছে দিতে চেয়েছিল। তাঁর কথায়, “প্যাটেলকে ইতিহাসের প্রকৃত জায়গায় ফিরিয়ে আনতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।”

এদিকে কংগ্রেস রাজনাথ সিংয়ের এই বক্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ মানিকম ঠাকুর বলেন, “এটি সম্পূর্ণ অসত্য। সবাই জানেন নেহরু ও প্যাটেলের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ। নেহরুর অবস্থান বরাবরই ছিল—মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা গুরুদ্বার—কোনও ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে যেন সরকারি অর্থ ব্যবহার না হয়। সেই খরচ জনগণের অংশগ্রহণেই হওয়া উচিত।”

ঠাকুর আরও অভিযোগ করেন, ইতিহাসকে রাজনৈতিক স্বার্থে বিকৃত করার উদ্দেশ্যেই এই ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে।

এই বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের রাজনীতিতে আবেগ, ইতিহাস ও মতাদর্শের জটিল মিশ্রণ হিসেবে কাজ করে এসেছে। তাই এই দাবি সামনে আসায় আগামীদিনে এ নিয়ে আরও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।