আজকাল ওয়েবডেস্ক: ছত্তিশগড়ের বস্তার, একসময় নাম শুনলেই হাড়হিম হয়ে যেত। মাওবাদী সন্ত্রাসের ভয়। এই অঞ্চল ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সেখানেই গত কয়েকবছরে নজরকাড়া পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিজাপুর জেলার কোন্ডাপল্লি গ্রামে, প্রথমবারের মতো মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ ঘটল। এটি কেবলএকটি প্রযুক্তিগত মাইলফলকই নয়, বরং স্থানীয়দের মধ্যে এই বিশ্বাসকেও আরও দৃঢ় করেছে যে- মাওবাদের পতন অবশেষে বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।
গ্রামবাসীদের মোবাইল ফোনে সিগন্যাল বার দেখা মাত্রই, আদিবাসী পরিবারগুলি গ্রামে বসানো টাওয়ারের দিকে ছুটেছে। টাওয়ারের সামনে গিয়ে কেউ ঐতিহ্যবাহী ঢোল বাজাচ্ছেন, বয়স্করা শ্রদ্ধার সঙ্গে টাওয়ার স্পর্শ করছেন। বেশ কয়েকজন মহিলাকে দেখা গেল প্রদীপ জ্বালিয়ে টাওয়ারের সামনেই প্রার্থনা করছেন। এই বদলের জন্য যে বাস্তারের হাজার হাজার বাসিন্দা বিগত কয়েক দশক ধরে অপেক্ষা করছিলেন।
তেলেঙ্গানা-ছত্তিশগড় সীমান্তের কাছে বনাঞ্চলের গভীরে অবস্থিত কোন্ডাপল্লি দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা, বিদ্যুৎ এবং পানীয় জলের মতো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই পরিস্থিতিতে, মোবাইল টাওয়ার স্থাপন শুধু পরিকাঠামোগত উন্নয়নই নয় - এটি ওই বিচ্ছিন্ন গ্রামের সঙ্গে বহির্বিশ্বের এক প্রতীকী সংযোগ।
যোগাযোগ, পরিবহন এবং জনসেবা বিষয়গুলি বহু বছর ধরে কোন্ডাপল্লি গ্রামে বাসিন্দাদের কাছে ছিল সোনার পাথর-বাটি। মাওবাদী বাধার কারণে প্রশাসন বাস্তারের গ্রামগুলিতে পৌঁছাতেই পারত না। কোন্ডাপল্লি-রও ছিল একই অবস্থা। তবে, ক্রমাগত নিরাপত্তা অভিযান, উন্নত প্রশাসনিক যোগাযোগ এবং কেন্দ্রীভূত সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে, অঞ্চলটি দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে। গ্রামবাসীদের জন্য, মোবাইল সংযোগের আগমন কেবল সুবিধা নয় বরং একটি নতুন জীবনের সূচনা।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাইয়ের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত "নিয়াদ নেল্লা নার" উদ্যোগ এই পরিবর্তনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রকল্পের আওতায়, ৬৯টি নতুন প্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক শিবিরের আশেপাশের ৪০৩টি গ্রামে পরিষেবা সরবরাহ করা হচ্ছে। নয়টি বিভাগ- সম্প্রদায় পরিষেবা প্রদান করছে, ১১টি বিভাগ সরাসরি পরিবারগুলিতে ব্যক্তিগত সুবিধা প্রকল্প সম্প্রসারণ করছে। ব্যাঙ্কিং, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, রেশন বিতরণ, যোগাযোগ এবং পানীয় জলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলি এখন আরও দক্ষতার সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা গত দু'বছরে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট ৭২৮টি নতুন মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১১৬টি মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় এবং ১১৫টি অন্যান্য জেলায় রয়েছে। ফোর-জি পরিষেবার প্রায় ৪৬৭টি টাওয়ার এখন চালু রয়েছে। ৪৪৯টি পুরানো টাওয়ার টু-জি থেকে ফোর-জিতে উন্নীত করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো, ডিজিটাল সংযোগ ঘন বন এবং পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী পরিবাগুলিতে আশার আলো দেখিয়েছে।
কোন্ডাপল্লিতে প্রশাসনিক শিবির প্রতিষ্ঠার পর থেকে, সরকারি কর্মকর্তারা নিয়মিত যোগাযোগ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। সীমান্ত সড়ক সংস্থা (বিআরও) দ্রুত গতিতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ করছে। দু'মাস আগে, এই গ্রামে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ফলে শিশুরা রাতে পড়াশোনা করতে পাড়ছে, ছোট ব্যবসার শ্রী ফিরছে এবং নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। পরিসংখ্যান নিশ্চিত করছে যে, সরকারি প্রকল্পগুলি বিলম্ব ছাড়াই প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছাচ্ছে।
মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগের প্রাপ্যতা এখন আধার যাচাইকরণ, ব্যাঙ্কিং, পেনশন বিতরণ, রেশন প্রক্রিয়া, অনলাইন শিক্ষা এবং টেলিমেডিসিনের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলিকে আরও সহজলভ্য করে তুলবে। যেসব বাসিন্দাদের একসময় ঘন বনের মধ্য দিয়ে মৌলিক পরিষেবার জন্য কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যেতে হত, তারা এখন তাদের দোরগোড়ায় পরিষেবা পেতে পারেন।
মুখ্যমন্ত্রী সাই এই সাফল্যকে বস্তারের ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন সূচনা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কোন্ডাপল্লিতে নেটওয়ার্ক সংযোগের আগমন কেবল যোগাযোগ পরিকাঠামোর সম্প্রসারণই নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে চাপা পড়ে থাকা আকাঙ্ক্ষার পুনরুজ্জীবন। তিনি ফের বলেছেন যে, রাজ্য সরকার বস্তারের প্রতিটি গ্রামে ডিজিটাল পরিষেবা এবং কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি পৌঁছাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন যে, আগামী বছরগুলিতে এই রূপান্তর আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
